বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত মানুষের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক ৭ টি বিষ
বিষ সম্পর্কে সকলেরই মোটামোটি ধারণা রয়েছে। কৃষিতে থেকে শুরু করে, বসত বাড়িতেও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে (পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশক প্রয়োগ, ইঁদুর দমন) ব্যবহৃত করে থাকি। কিন্তু এসকল বিষ মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর হলেও কিছু বিষ রয়েছে, যেগুলো এতটাই মারাত্নক যেগুলো মানব শরীরে প্রবেশ করলে খুব দ্রুত মৃত্যু ঘটতে পারে। বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত মানুষের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক ৭টি বিষ নিয়ে আলোচনা করলাম।
১. পলোনিয়াম-২১০
এটি পলোনিয়ামের একটি বিরলতম আইসোটোপ। ইউরোনিয়ামের আকরিকে এটির সন্ধান পাওয়া যায়। ত্বকের বাহিরে এটি ক্ষতিকর নয়। তবে ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করার সাথেই এর বিকিরণ শুরু হয়। পলোনিয়াম আলফা কণা নিঃসরণ করার মাধ্যমে মানবদেহের ক্ষতি করতে থাকে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী নেতা ইয়াসির আরাফাতকে চিঠিতে বিষ মিশিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল সরকার তাকে হত্যা করেন। এটি এতটাই মারাত্নক যে, এক গ্রাম পলোনিয়াম-২১০ পঞ্চাশ মিলিয়ন মানুষকে মারতে পারে।
২. পটাসিয়াম সায়ানাইড
এটি সেবন সাথেই মানুষের মৃত্যু হয়। প্রীতিলতা সেন সূর্য সেনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ দমনের এক অভিযানে পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাবে আটকা পড়ায়, পটাসিয়াম সায়ানাইড সেবন করে আত্নহত্যা করেন। তিনি ছিলেন এদেশের ব্রিটিশ শোষণ বিরোধী আন্দোলনকারী মহান নারী। এ উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেকে দেশের জন্য বিসর্জন দিয়েছিলেন। পটাসিয়াম সায়ানাইড সাধারণত আকরিক থেকে সোনা বিশুদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি শরীরে প্রবেশ করলে রক্তে লৌহ জমাট বদ্ধ হবার কারণে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
৩. অ্যাট্রপা বেলাডোননা
বেলাডোননা সংগ্রহ করা হয় উদ্ভিদ থেকে। এ উদ্ভিদের পাতা ও ফল অনেক বিষাক্ত। এ গাছের ১০ টি ফল খেলেই মৃত্যু ঘটতে পারে, কারণ এতে মিশে রয়েছে- ছোলানাইন, হায়োসাইন ও এট্রোপাইনের মতো বিষাক্ত সব উপাদান। এক সময় ইতালির ভেনিস শহরের মহিলারা তাদের সৌন্দর্য চর্চায় এটি ব্যবহার করায়, এর নাম রাখা হয়েছিল বেলাডোননা। কারণ ‘বেলা-ডোননা’ এর অর্থ 'সুন্দরী রমনী'। কিন্তু পরবর্তীতে এটি বিষ হিসেবে মানুষকে হত্যা করার কাজে ব্যবহার করা শুরু হতো।
৪. আর্সেনিক
এটি হলো সবচেয়ে বিষাক্ত ধাতু। এক সময় এদেশের অনেক অনেক নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া যেত। মানব দেহে আর্সেনিক মাত্রাতিরিক্ত প্রবেশ করলে এর বিষ্ক্রিয়ায় নানাবিধ শারীরিক জটিলতা, যেমন- পেট ব্যথা, বমি হওয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এটি অনেক শক্তিশালী একটা বিষাক্ত পদার্থ। ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন, নেপোলিয়ান বেনোপোর্টকে আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিলেন।
৫. কনিয়াম ম্যালকাটুম (হেমলক)
এটিকে হেমলক বিষ নামেই প্রায় সবাই চিনে থাকবেন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিষের মধ্যে একটি। এটি কনিয়াম ম্যালকাটুম (হেমলক গাছের বৈজ্ঞানিক নাম-Conium maculatum) নামক গাছটি থেকেই পাওয়া যায়। এ গাছটির পুরো অংশটিই বিষাক্ত। এই বিষ খেয়ে যুক্তিবিদ্যার জনক বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এই বিষটি শরীরকে ধীরে ধীরে প্যারালাইসিসের মাধ্যমে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়।
৬. ডাই-মিথাইল-মারকারি
এটিও অনেক মারাত্নক বিষাক্ত এক রাসায়নিক পদার্থ। তবে এটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই মানুষের মৃত্যু হয় না। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ডার্টমাউথ কলেজের রসায়ন বিষয়ক এক মহিলা প্রফেসরে লিটেক্স গ্লাভসে কয়েক ফোটা ডাই-মিথাইল-মারকারি ছিটিয়ে পড়ার মাধ্যমে তার শরীরে প্রবেশ করেছিল। ৪ মাস পর তার শরীরে এ বিষের প্রভাব শুরু হয় এবং ১০ মাস পর তার মৃত্যু ঘটে।
৭. ব্যাট্রাচোটক্সিন(BTX)
ব্যাট্রাচোটক্সিন(Batrachotoxin) একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক বিষ। এই বিষটি ডার্ট নামক বিষাক্ত ব্যাঙের ত্বকে তৈরি হয়। এই ধরনের একটি উভচর প্রাণীর মধ্যে এতটাই বিষাক্ত পদার্থ বিদ্যমান যে এটি বেশ কয়েকটি হাতিকে মেরে ফেলতে পারবে।