বৈজ্ঞানিক নাম কি এবং কেন?
বৈজ্ঞানিক নামকরণ (Scientific Nomenclature)
কোনো বিশেষ প্রাণী বা প্রাণিগোষ্ঠীর
নির্দিষ্ট নামে শনাক্তরণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে বলা হয় নাম বৈজ্ঞানিক নামকরণ। আর এই
বৈজ্ঞানিক নামকরণ পদ্ধতিতে কোনো প্রাণীর যে নাম দেয়া হয় তাকে বলা হয় বৈজ্ঞানিক নাম।
জীববিজ্ঞানীর এখন পর্যন্ত ২৭০০০০ উদ্ভিদ
এবং ১৫লক্ষেরও বেশি প্রাণী প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন। তবে এসব প্রাণীর বাহিরেও যদি কোনো একটি প্রাণী ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানের
পর নতুন হিসেবে প্রমাণিত হলে উক্ত প্রাণীকে ICZN
এর নিয়মানুযায়ী বৈজ্ঞানিক নামকরণ করতে হবে। ICZN কি সেটা একটু নিচে আলোচনা করেছি।
সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস সর্বপ্রথম একটি পদ্ধতির
প্রবর্তন করেন। এটি দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি(Binominal Nomenclature System) নামে
পরিচিত। এ নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক জীবের বৈজ্ঞানক নামের দুটি অংশ থাকে, যার প্রথমটি
গণ (genus) নাম এবং দ্বিতীয়টি প্রজাতি (species) নাম। (গণ হলো পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত একাধিক
প্রজাতির সমন্বয়ে গঠিত একক। প্রজাতি হলো শ্রেণিবিন্যাসের মূল ভিত্তি, আরো সহজে যদি
বলা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনো সন্তান উৎপাদন
সক্ষম জীবগোষ্ঠী অন্য কোনো জীব গোষ্ঠীর সাথে প্রজননগতভাবে বিচ্ছন্ন বা আলাদা থাকে,
সেই জীবগোষ্ঠীকে প্রজাতি বলে।) গণ নামের প্রথম অক্ষর ইংরেজী বর্ণমালার বড় অক্ষরে এবং
প্রজাতি নামের আদ্যক্ষর ছোট অক্ষরে লিখতে হয়। এভাবে দুটি ল্যাটিন বা রূপান্তরিত ল্যটিন
শব্দ দিয়ে প্রাণীর নামকরণের পদ্ধতিকে দ্বিপদ নামকরণ বলে।
অনেক সময় একটি প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে
বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অঙ্গসংস্থানিক পার্থক্য দেখা যায়। সে সব সদস্যকে ঐ নির্দিষ্ট
প্রজাতির উপপ্রজাতি (subspecies) হিসেবে গণ্য করা হয়। তখন গণ ও প্রজাতি সমন্বিত দ্বিপদ
নামটি উপজাতিসহ ত্রিপদ নামে পরিচিত হয়। এভাবে, উপপ্রজাতিসত কোনো প্রাণীর নামকরণকে ত্রিপদ নামকরণ বলে। যেমন: ইউরোপীয়ান চড়ু্ই
পাখির বৈজ্ঞানিক নাম- Passer domesticus, কিন্তু নীলনদ এলাকার চড়ুই পাখির নাম- Passer
domesticus niloticus। পাখি বিজ্ঞানী
Schlegel সর্বপ্রথম ত্রিপদ নামকরণের পদ্ধতিটির প্রচলন করেন এবং এটি ICZN কর্তৃক স্বীকৃত
পদ্ধতি।
বৈজ্ঞানিক নামকরণের প্রধান নিয়মাবলিগুলো
কোনো জীবের নামকরণ পদ্ধতির প্রচলন অত্যন্ত
জটিল এবং তা কতকগুলো নিয়ম মেনে সমাধান করা হয়। প্রাণীর নামকরণের নিয়মগুলো প্রাণী নামকরণের
আন্তর্জাতিক সংস্থা International Commission on Zoological Nomenclature (ICZN) প্রণয়ন
করে থাকে এবং নিয়মগুলো International Code on Zoological Nomenclature-এ লিপিবদ্ধ করা
হয়। নামকরণের প্রধান নিয়ামবলি উল্লেখ করা হলো-
১. প্রত্যেক প্রাণীর একটি বৈজ্ঞানিক
নাম থাকবে এবং এ নামের দুটি অংশ থাকবে, একে দ্বিপদ নামকরণ বলা হবে।
২. দ্বিপদ নামের প্রথম অংশটি ঐ জীবের
গণ নাম ও দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি নামের নির্দেশক।
৩. প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নামটি অবশ্যেই
ল্যাটিন বা ল্যাটিনকৃত হতে হবে। দ্বিপদ নামকরণ ছাপা অক্ষরে হলে সবসময় ইটালিক
(ডান দিকে বাঁকা করে) হরফে হবে (যেমন- Homo sapiens, মানুষ; Panthera tigris, বাঘ)।
৪. গণ-নামটি বিশেষ্য ও আদ্যাক্ষরটি
অবশ্যই বড় হরফে লিখতে হবে এবং প্রজাতি নামটি বিশেষণ যার আদ্যক্ষরটি ছোট হরফে লিখতে
হবে।