মস্তিস্কের অসুখ ও প্রতিকার
মস্তিস্কের অসুখ মানে হচ্ছে মস্তিষ্কের কোনো অংশের কাজ করা বন্ধ হওয়া বা অস্বাভাবিক অবস্থা হওয়া। এর ফলে রোগীর চিন্তা, ভাবনা, স্মৃতি, আচরণ, আরোগ্যতা, পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত জীবনের উপর প্রভাব পড়ে।
মস্তিষ্কের অসুখের ধরনের উপর এর লক্ষণ, কারন, চিকিৎসা, প্রতিরোধের মতো বিষয়গুলো নির্ভর করে।
নির্দিষ্ট কিছু মস্তিষ্কের অসুখ নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে:
আলঝেইমার্স
আলঝেইমার্স রোগ হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ, যার ফলে রোগীর স্মৃতি, মেধা, বিচার-ক্ষমতা, আচরণ ও মেজাজে অনেক পরিবর্তন আসে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা কিছু মনে রাখতে পারে না। ১৯০৬ সালে জার্মান মনো-চিকিৎসক ও স্নায়ু-রোগ-বিজ্ঞানী আলোইস আলঝেইমার এর বর্ণনা দিয়েছিলেন।
প্রতিকার
আলঝেইমার্সের কোনো প্রতিকার নেই বললেই চলে। তবে, লিকেনেম্যাব নামের এক ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে, যেটি মস্তিষ্কে কোষ ধ্বংসের গতি কমিয়ে দেয়।
পার্কিনসন
পার্কিনসন রোগের কারণ এখনো সম্পূর্ণরূপে অজানা। কিন্তু মনে করা হয় যে, এটির সাথে জিনগত, পরিবেশগত ও অন্যান্য কারণের সম্পর্ক রয়েছে।
পার্কিনসন রোগের মূল ঘটনা হলো, মস্তিষ্কের ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার (নিউরোনের মাঝে বার্তা পাঠানোর এক রাসায়নিক পদার্থ ) তৈরির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া।
পার্কিনসন রোগের লক্ষণ
পার্কিনসন রোগের লক্ষণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু লক্ষণ হলো:
১. কাঁপুনি (tremor): এটি হাত, পা, মাথা, মুখ, গলা, বা অন্যান্য অঙ্গের নির্দিষ্ট অংশ অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কাঁপা।
২. ব্রাডিকিনেশিয়া (bradykinesia): এটি শরীরের গতি ধীর হয়ে যাওয়া, শারীরিক স্বয়ংক্রিয় চলন বা কাজসমূহ ( চোখের পলক ফেলা, হাঁটার সময় হাত নড়ানো) কমে যাওয়া।
৩. কাঠিন্য (rigidity): রিজিডিটি হলো পার্কিনসন রোগের একটি মূল লক্ষণ, যা মাংসপেশিতে শক্তির অভাবে কারণে হয়। এর ফলে মাংসপেশি সংকোচন-প্রসারণে সমস্যা হয় এবং শরীরের অংশগুলি স্থির হয়ে যায়।
৪. হাইপোমিমিয়া (Hypomimia): মুখের অভিব্যক্তি হ্রাসকে ফেসিয়াল মাস্কিং (facial masking) বা হাইপোমিমিয়া বলা হয়। সঠিক আবেগ ঘন সময়ে মুখের সঠিক এক্সপ্রেশন আসে না।
মাইগ্রেন
মাথার এক পাশে কম্পন দিয়ে মাঝারি বা তীব্র ধরনের ব্যাথা অনুভূত হওয়াকে মাইগ্রেন বলে। অনেক সময় এই ব্যাথা মাথার এক পাশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে মাথার সেই পাশের পুরো অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তবে এই ব্যথা দুদিকেও হতে পারে।
মাইগ্রেন হলে অনেক সময় চোখে হঠাৎ আলোর
ঝলকানি দেখার মতো মনে হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের কোনো লক্ষণ থাকেনা।
মাইগ্রেনের কিছু উপসর্গ হলো-
১. মাথার যে কোনো এক পাশে মাঝারি বা
তীব্র ধরনের ব্যাথা অনুভূত হওয়া
২. মাথা ব্যাথার সাথে বমি ভাব হতে পারে
৩. ঘেমে যাওয়া
৪. মনোযোগ কমে যাওয়া
৫. অনেক বেশি ঠান্ডা বা গরম অনুভব করা
৬. পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া হওয়া
প্রতিকার
- যদি ঘন ঘন তীব্র মাথা ব্যথা হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত
- মাইগ্রেন থাকলে উচ্চ মাত্রার ব্যথা নাশক ওষুধ খাওয়া পরিহার করতে হবে