মোখা ঘূর্ণিঝড় ও এর কোন সংকেতের কী ব্যাখ্যা?

মোখা

প্রবল গতি ও শক্তি নিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও বাংলাদেশের কক্সবাজারের স্থলভাগে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড মেটারোজিক্যাল অরগ্যানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী   গ্রীষ্ম মন্ডলীয় সামুদ্রিক ঝড়ের ক্ষেত্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ একটানা ৬৩ কিলোমিটারের বেশি হলে সেটিকে সাইক্লোন বলে, আর বাতাসের গতিবেগ এর চেয়ে কম হলে এটাকে বলা হয় নিম্নচাপ। বর্তমানে গভীর নিম্নচাপে শক্তি সঞ্চয় করে সাইক্লোনে পরিণত হবার পর সেই ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় মোখা।

কিভাবে এলো এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম?

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের প্রচলন শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। উত্তর ভারত মহাসাগর, তথা বঙ্গপোসাগর, আরব সাগরে সৃষ্ট হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নাম, এই অঞ্চলের ১৩ টি দেশ ঠিক করে দেয়। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড মেটারোজিক্যাল অরগ্যানাইজেশনের প্যানেল সদস্য দেশগুলো ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এই নামগুলো গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড মেটারোজিক্যাল অরগ্যানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী ’মোখা’ নামটি দিয়েছে ইয়েমেন। মোখা ইয়েমেনের পরিচিত একটি শহর। সারা বিশ্বে এই শহরের পরিচিতি তাদের মোখা কফির জন্য। এই শহর থেকেই এই কফির উৎপাদন ও সারা বিশ্বে সরবারহ করা হয়। এই শহরের সংস্কৃতি ও পরিচিতি তুলে ধরতেই ইয়েমেন এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে মোখা। তবে এর পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ’বিপর্যয়’, যা বাংলাদেশের দেয়া নাম।

মোখা ঘূর্ণিঝড় ও এর সংকেতের কী ব্যাখ্যা?


ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা

বঙ্গপোসাগরে অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও আরো ঘনীভূত হয়ে ১৩ মে সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর, উত্তর- পূর্ব দিকে ঘনিভূত হয়ে ১৪ মে সকাল ৯ থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে কক্সবাজার এবং উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবগ ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মোংলা ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা ৮ নম্বর এবং কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।

কোন সংকেতের কী ব্যাখ্যা?

  • ১০ নং মহাবিপদ সংকেত
প্রচন্ড ঝড় বন্দরের উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। অর্থাৎ এই সংকেত জারিকৃত স্থানসমূহ প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়বেই, এমনটা হবার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি।

  • ৮ নং মহাবিপদ সংকেত

প্রচন্ড ঝড় বন্দরের বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে। ঝড়ের ক্ষেত্রে ঝড়ের কেন্দ্র এবং এর কেন্দ্রের ডান দিক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বাম প্রান্ত তুলনামূলক কম ঝুকিতে থাকে।

  • ৪ নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত

বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত।

জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সংলগ্ন দ্বীপ ও চর সমূহে ৮ থেকে ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর এবং বরগুণাতে ৫ থেকে ৭ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url