স্মার্টফোনের LCD, AMOLED ডিসপ্লে আসলে কি?
স্মার্টফোনের ডিসপ্লে সম্পর্কে ধারণা
স্মার্টফোনের রিভিউ দেখার সময় বিভিন্ন
রকমের ডিসপ্লের কথা শুনি, যেমন- IPS, LCD, PLS, AMOLED, OLED, Super AMOLED, Dynamic
AMOLED, Fluid AMOLED, Apple এর জন্য- Super Retina XDR OLED। এসব ডিসপ্লে প্রযুক্তির
মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে আপনিও স্মার্টফোন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ
হতে পারবেন।
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের আধুনিক ডিসপ্লে
প্রযুক্তিগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. LCD (Liquid Crystal Display)
২. OLED (Organic Light Emitting
Diode)
LCD ও OLED কি?
LCD ও OLED হচ্ছে স্মার্টফোনের প্রধান ২টি ডিসপ্লে প্রযুক্তি। এই ২টি সম্পর্কে জানলে আপনি অন্যান্য ডিসপ্লে সম্পর্কে সহজেই ধারণা পাবেন।
তবে, এখানে বুঝার বিষয় মূলত ২টি, ১. LCD
ও ২. LED। LCD হচ্ছে স্মার্টফোনের একটি প্রাথমিক ডিসপ্লে প্রযুক্তি। LCD ডিসপ্লের পিছনের
Backlit ডিসপ্লেতে ছোট Fluroscent বাল্ব লাগানো থাকে। আমরা বাসা-বাড়িতে যে এনার্জি
বাতি ব্যবহার করি সেগুলো Fluroscent বাতি। যখন কোনো ডিসপ্লেতে আলোর ব্যাক আপ দিতে বা
ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা বাড়াতে Fluroscent লাইট লাগানো থাকে সেই ডিসপ্লেগুলোকেই শুধু LCD
প্যানেল ডিসপ্লে বলে।
OLED এর LED হলো ছোট এক ধরনের লাইট। সচরাচর আমরা এটি দেখি খুব তবে নামটা হয়তো জানি না। তাই নিচের ছবিটি দেখুন।
যখনই ডিসপ্লেতে Fluroscent লাইটের পরিবর্তে LED লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে তখন সেটাকে বলা হচ্ছে, LED ডিসপ্লে। সহজ ভাষায় এর পার্থক্য হলো, সকল LED ডিসপ্লেই LCD ডিসপ্লে কিন্তু সকল LCD ডিসপ্লেই LED ডিসপ্লে নয়।
LCD ডিসপ্লে প্যানেল
বর্তমানের স্মার্টফোনের ডিসপ্লেগুলোতে
LCD-LED ডিসপ্লে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ডিসপ্লেতে Fluroscent লাইটের পরিবর্তে
LED লাইট ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্মার্টফোনের LCD ডিসপ্লে বিভিন্ন প্রকার
হয়। যেমন-
১. IPS LCD
LCD ডিসপ্লেগুলোর মধ্যে এটা সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে IPS, এটা স্মার্টফোনের মধ্যে বর্তমানে খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। IPS এর পূর্ণরূপ-"In-Plane Switching"। এই ডিসপ্লে ছবির রঙকে বাড়িয়ে দেয়না, অর্থাৎ IPS- LCD প্যানেল প্রাকৃতিক রঙটা দেখতে পাওয়া যায়।
সুবিধাসমূহ
- এটাতে লেয়ার বেশি হওয়ায়, ইন ডিসপ্লে ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করা যায় না।
- সৃজনশীল কাজ যেমন- গ্রাফিক্স এর কাজ সমূহ করার জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়
- দামে তুলনামূলক সস্তা
অসুবিধাসমূহ
- কালো রঙগুলোর জায়গাতে ভালো করে কালচে ভাবটা তুলে ধরতে পারে না
- ভিউয়িং বা দৃষ্টিকোণটা তুলনামূলক খারাপ
- এই ডিসপ্লেগুলো চার্জ বেশি ব্যবহার করে।
PLS LCD
PLS LCD প্যানেল হলো একধরনের IPS প্যানেল যা শুধুমাত্র স্যামসাং তৈরি করে। PLS এর পূর্ণরূপ- Plane to Line Switching। PLS প্যানেলের বৈশিষ্ট্য হলো- এটি অন্যান্য IPS ডিসপ্লে ১০% বেশি উজ্জ্বলতা, উন্নত দৃষ্টিকোণ, ১৫% কম উৎপাদন খরচ, ভালো চিত্র মান এবং নমনীয় প্যানেলের সুবিধা।২. TFT (Thin-Film-Transistor)
TFT ডিসপ্লেগুলি অন্যান্য ডিসপ্লেগুলি থেকে বেশি উজ্জ্বল এবং উচ্চ রেজুলেশন (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে পিক্সেলের পরিমাণ) প্রদর্শন করে। এছাড়াও, এই ডিসপ্লেগুলি পাতলা এবং অনেক ছোট উপকরণের মধ্যে ব্যবহার করা হয়।
এই ডিসপ্লে প্যানেলটি বিভিন্ন ডিজিটাল উপকরণে ব্যবহৃত হয়, যেমন- কম্পিউটার মনিটর, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক উপকরণ।
OLED ডিসপ্লে প্যানেল
OLED প্রযুক্তিতে প্রত্যেকটি পিক্সেলের (একটি ইমেজ বা ছবির বর্গাকার ক্ষুদ্রতম একক- পিক্সেল) জন্য আলাদা আলাদা লাইট ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু IPS LCD ডিসপ্লেতে সবগুলো পিক্সেলকে
থেকে LED বড় কিছু লাইট একসাথে উজ্জ্বলতা দিতো।
সুবিধাসমূহ
- এই ডিসপ্লেগুলো বেশি ছবির প্রকৃত রঙ থেকে বেশি রঙিন দৃশ্যমান করে
- ইন ডিসপ্লে ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করা যায়
অসুবিধাসমূহ
- ছবিতে সাদা রঙের ক্ষেত্রে হলদে রঙ হয়ে ওঠে
- এই ডিসপ্লেগুলো তুলনামূলক দামি হয়।
OLED এর মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের প্রকারভেদ
রয়েছে। যেমন-
১. AMOLED
(Active-Matrix Organic
Light-Emitting Diode)। এটা একটা টেকনিক্যাল টার্ম। এই টেকনিক্যাল টার্মটার সৃজনশীল
ব্যবহারের লাইসেন্স সর্বপ্রথম শুধু স্যামসাং কিনে নিয়েছিল। স্যামসাং কোম্পানি OLED
প্যানেলটিকে উন্নত করে একধরনের প্রযুক্তি তৈরি করেছে, সেটি হলো- AMOLED ডিসপ্লে। বর্তমানে
বিভিন্ন স্মার্টফোন কোম্পানি এই ডিসপ্লে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করছে।
২. Super AMOLED
অনেকের ধারণা, AMOLED থেকে Super
AMOLED এর তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রধান
পার্থক্যগুলো হলো-
- AMOLED থেকে Super AMOLED ২০% উজ্জ্বলতাপূর্ণ স্ক্রীন দেয়
- ২০% কম চার্জ ব্যয় করে
- ৮০% কম সূর্য এর আলো প্রতিফলন করে।
৩. Super AMOLED Plus
Super AMOLED থেকে একটু মডিফাইড এই
ডিসপ্লেটি।
৪. Dynamic AMOLED
Dynamic AMOLEDও একটি Super AMOLED
ডিসপ্লে। তবে এটি নীল রঙের আলোর আধিপত্য কম। কেননা, নীল রঙের আলোটা চোখের জন্য ক্ষতিকর।
এই ডিসপ্লের কালার অ্যাকুরেসি বেশি। HDR10+ সার্টিফিকেশন রয়েছে।
এই চারটি মূলত স্যামসাংয়ের প্রযুক্তি।
৫. Fluid AMOLED
এই ডিসপ্লেগুলো OnePlus স্মার্টফোনে
ব্যবহৃত হচ্ছে। Dynamic AMOLED থেকে একটু মডিফাইড। কিন্তু OnePlus হায়ার রিফ্রেসেট
যুক্ত করে দিয়েছে। যেমন- ৯০Hz, ১২০Hz। যেহুতু হায়ার রিফ্রেশেট যু্ক্ত করায় ডিসপ্লেটি
বেশি স্মুথ হয়েছে, তাই ডিসপ্লেটির নামেনর সাথে Fluid যোগ করা হয়েছে।
Super Retina XDR OLED
এটাও মূলত একটি Dynamic AMOLED প্যানেল।
এই ডিসপ্লেতে অ্যাপল কোম্পানি নিজস্ব কিছু ফিচার যুক্ত করায়, এই বিশাল নিজস্ব নাম দিয়েছে।