ইফতারে আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনী খেলে শরীরে কী হয়?
ইফতারে আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ভাজা
পোড়া খেয়ে থাকি, যেমন- আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনী ইত্যাদি। এইগুলো খাওয়াটা যে ক্ষতিকর
সেটা আমরা প্রায় জানি। কিন্তু এগুলো ইফতারে খাওয়া কতটুকু ক্ষতিকর সে সম্পর্কে কিছু গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করলাম।
এসব ভাজা পোড়ায় কি ক্ষতিকর পদার্থ থাকে?
হোটেল বা রেঁস্তারায় যখন এই খাবারগুলো
যখন বানানো হয়, তখন একই তেল ব্যবহার করে অনেকবার ব্যবহার করে এগুলো ভাজা হয়। অনেক সময়
দেখা যায়, কয়েক ঘন্টা ধরে একই তেল ফুটতে থাকে এবং এর মধ্যেই বারবার বিভিন্ন জিনিস ভাজা
হয়। তেল যখন অনেক সময় ধরে ফুটতে থাকে, তখন এর মধ্যে থাকা ফ্যাটি এসিড ট্রান্সফরম বা
পরিবর্তিত হয়ে ট্রান্স-ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়।
মানব দেহে ট্রান্স-ফ্যাটি এসিড কি ক্ষতি করতে পারে?
অনেকগুলো ক্লিনিকাল পরীক্ষায় দেখা গেছে,
এসব ট্রান্স-ফ্যাটি এসিড বা ট্রান্স-ফ্যাট খেলে মানব শরীরের (LDL) লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন
কোলস্টেরল/ খারাপ কোলস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই লো ডেনসিটির লিপোপ্রোটিন আমাদের
হৃৎপিন্ডের রক্ত নালিকার পথে জমা হয়ে যেতে পারে। এতে হৃৎপিন্ডে রক্ত যাবার পথটা ছোট
হয়ে যায়। এর ফলে পরবর্তীতে হার্টের বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের সূচনা হতে পারে।
হৃৎরোগের ঝুকি বাড়িয়ে দেয়
২৯জন মানুষের উপর একটা গবেষণা করা হয়।
তাদেরকে এক মাস ধরে ট্রান্সফ্যাট খেতে দেয়া হয়। একমাস পরে দেখা যায়, তাদের শরীরের ভালো
কোলস্টেরল কমে যায় ২১%। এছাড়া তাদের রক্ত নালিকায়ও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
শুধু এক মাস ট্রান্স-ফ্যাট খাওয়াতেই
এত বড় সমস্যা হয়ে যায়, আর যদি আপনি মনে করেন শুধু রমজান মাসে ভাজা পোড়া খেলে কিছুই
হবে না, তাহলে আমি বলবো আপনার ধারণা ভুল।
(LDL) খারাপ কোলস্টেরলের ঘনত্ব কম হওয়ায়
এটির রক্তনালিতে আটকিয়ে যাবার সম্ভবনা বেশি থাকে, কিন্তু (HDL) হাই ডেনসিটি লিপো-প্রোটিন
বা ভালো কোলস্টেরলের রক্তনালিতে আটকে যাবার সম্ভবনা অনেক কম থাকে এবং এই কোলস্টেরল
রক্ত এর মধ্যে দিয়ে যাবার সময় রক্তনালিতে আটকে যাওয়া ঐ খারাপ কোলেস্টেরলকে ধাক্কা দিয়ে
সরিয়ে নিতে পারে। ফলে লো ডেনসিটির লিপো-প্রোটিনগুলো জমাট বাধার সম্ভবনা কমে যায়।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ডায়াবেটিসের সাথে এই ট্রান্সফ্যাটের সম্পর্ক
২০০১ সালে, ৮০০০০ জন মানুষের উপর এক
গবেষণায় দেখা যায়, যারা ট্রান্স-ফ্যাট খেয়েছিলেন তাদের ডায়াবেটিসের সম্ভবনা বেড়ে যায়
৪০%। আরেক গবেষণায়, ইঁদুরদেরকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে বিভিন্ন খাবার খেতে দিয়ে পরিবর্তন
পর্যবেক্ষণ করা হয়। যেই ইঁদুর গুলোকে ট্রান্স-ফ্যাট খেতে দেয়া হয়েছিল, সেই ইঁদুরগুলোর
ইনসুলিনের সহনশীলতা হঠাৎ কমে গিয়েছিল অর্থাৎ ডায়াবেটিস এর ঝুকি বেড়ে গেল, তার সাথে
এদের লিভারে চর্বি জমে গেল। এতে লিভার ফাইব্রোসিসের সম্ভবনা বেড়ে গেল। এছাড়াও অনেক
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ট্রান্স-ফ্যাট ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
প্রদাহ (Inflammation)
টিস্যুর যে কোনো ধরনের ক্ষতির ফলে সবশেষে
ব্যথার প্রকাশ ঘটলে তাকে প্রদাহ (Inflammation) বলে। ধারণা করা হয়, অনেক দীর্ঘ মেয়াদী
রোগের সূচনা হয় Inflammation থেকে। অর্থাৎ Inflammation হচ্ছে অনেক দীর্ঘ মেয়াদী রোগের
প্রাথমিক কারণ। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এই ট্রান্স-ফ্যাট এই Inflammation বা
Inflammatory Marker গুলোকে বাড়িয়ে দিতে পারে। উপরে যে গবেষণায় ইঁদুরের ব্যবহার করা
হয়েছিল, সেখানে ট্রান্স-ফ্যাট খাওয়া ইঁদুরগুলোর ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহ
(Intestinal Inflammation) অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
ক্যন্সার সৃষ্টি
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রান্স-ফ্যাট
বিভিন্ন ধরনের ক্যন্সারের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যেমন- স্তন ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার,
কোলন ক্যন্সার। অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মহিলাদের রক্তে ট্রান্স-ফ্যাটের
পরিমাণ বেশি, তাদের স্তন ক্যান্সার হবার সম্ভবনা দ্বিগুন হয়ে যায়।
পুরুষ ও মহিলা- উভয়ের উপরই আরেক গবেষণা
করে দেখা গিয়েছে, ট্রান্স-ফ্যাট বেশি খাওয়াতে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০% বেড়ে যায়।
এছাড়া বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে যেগুলো
আপনারা সাধারণত অনুভব করেন। যেমন- এসিডিটি হওয়া, বুক জালা-পোড়া হওয়া ইত্যাদি।
ইফতারে ভাজা-পোড়ার পরিবর্তে কি খেতে পারবো?
আমরা যদি ভাজ পোড়া ইফতারে না খেয়ে,
এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ইফতার করতে পারেন। আপনি ইফতারে লাল চালের ভাত বা লাল আটার
রুটি খেতে পারেন, লাল চিড়া মধু দিয়ে টক দইয়ের সাথে খেতে পারেন। তবে সাদা ভাত বা সাদা
রুটি খেলে এগুলো খুব তাড়াতাড়ি হজমের ফলে শরীরে Glucose বেড়ে যাবে। এতে আপনার শরীর দূর্বল
অনুভব হতে পারে।