যে ১০টি খাবারের কারণে মানুষ বায়ু ত্যাগ করে ?
একজন মানুষ প্রতিদিন সাধারণত ৫-১৫ বার বায়ু ত্যাগ করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনে নির্দিষ্ট সময়ে পেটে গ্যাস থাকা ভালো স্বাস্থ্যের লক্ষণ। বায়ু ত্যাগ ক্রিয়া প্রমাণ করে আপনি সুস্থ এবং আপনার পরিপাক ক্রিয়া সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে। যদিও মানুষ সাধারণত লোক লজ্জার ভয়ে প্রকাশ্যে বায়ুত্যাগ করে না। অনেকে আবার অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতেও পরে। কিন্তু আপনি যদি বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পারেন তাহলে বায়ু ত্যাগ করার বিষয়টি আপনার কাছেও স্বাভাবিক মনে হবে। যে খবারগুলোর কারণে মানূষ বায়ু ত্যাগ করে সেগুলো হৃৎপিন্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর। ফাইবারযুক্ত জটিল কার্বোহাইড্রেট যেগুলো মানুষের শরীরের ভেতরে সহজে ভাঙতে পারেনা। কিন্তু অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া সেগুলো সহজেই ভাঙতে পারে।
কোন খাবারগুলোর জন্য মানুষ বায়ু ত্যাগ করে?
আমাদের খাদ্য তালিকার যে খাবারগুলোতে
পলিস্যাকারাইড ফাইবার বা জটিল শর্করা থাকে, সেগুলো এই বায়ু ত্যাগের কারণে হতে পারে।
এছাড়া দৈনন্দিন এমন কিছু খাবার আমরা মুখে দেই যেগুলোও মাত্রারিক্ত বাতাস আমাদের পেটে
প্রবেশ করায়। অনেক সময় সেটিও আমাদের বায়ু নির্গত হবার কারণ হয়ে থাকে। এসকল খাবারের
একটি তালিকা হলো-
১. চর্বিজাতীয় খাবার
২. শিমজাতীয় খাবার
৩. ডিম
৪. পেঁয়াজ
৫. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
৬. গম ও শস্যজাতীয় খাবার
৭. ব্রকলি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি
৮. ফলমূল
৯. চুইং গাম
১০. বাদাম
চর্বিজাতীয় খাবার- বিভিন্ন ধরনের মাংস(বিশেষ করে গরুর মাংস)
চর্বিজাতীয় খাবার খেলে সেগুলো ধীর গতিতে
হজম হয়। এসব খাবার আপনার অন্ত্রে জমা হতে অনেক সময় লাগে। চর্বিযুক্ত মাংস হজম করা দ্বিগুন
কঠিন, কারণ এতে অ্যামিনো এসিড- ম্যাথিওনিন সমৃদ্ধ। ম্যাথিওনিনে সালফার থাকে। মানুষের
অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সালফার ভেঙে হাইড্রোজেন সালফাইডে পরিণত হয়, যেটার গন্ধ
পঁচা ডিমের মতো। আর এরকম খাবার খেলে পাকস্থলিতে হাইড্রোজেন সালফাইড অল্প পরিমাণে জমা
হয়, ফলে বায়ু নির্গত হয়। অনেক সময় সেটা দূর্গন্ধযুক্ত হয়।
শিমজাতীয় খাবার
বিভিন্ন ধরনের শিম ও ডালে প্রচুর পরিমাণে
ফাইবার, র্যাফিনোজ থাকে। এছাড়া এগুলোতে কমপ্লেক্স সুগারও থাকে, যেটা ভালো ভাবে প্রক্রিয়াকরণ
করা যায় না। এই চিনিগুলো অন্ত্রে যায়, শক্তির জন্য পাকস্থলী সেটা ব্যবহার করে। ফলে
পাকস্থলীতে অতিরিক্ত বায়ু তৈরি হয়। হাইড্রোজেন, মিথেন ও গন্ধযুক্ত সালফারও উৎপন্ন হয়।
আর এসব খাবার খেলে বায়ু নির্গত হওয়াটা স্বাভাবিক।
ডিম
ডিম বায়ু ত্যাগের অন্যতম কারণ হতে পারে।
কারণ- ডিমে থাকে সালফার প্যাকড মেথিওনিন। সুতরাং আপনি যদি দূর্গন্ধ ছাড়া বায়ু ত্যাগ
করতে চান, বায়ু উৎপাদনকারী অন্যান্য খাবার যেমন- শিম বা চর্বিযুক্ত মাংসের সঙ্গে ডিম
খাবেন না। ডিম খেয়ে যদি আপনার শরীর ফুলে যায় বা শরীরে যদি শিরশির ভাব আসে, তাহলে ধরে
নিতে হবে আপনার হয়তো ডিমে অ্যালার্জি আছে। তাহলে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজ, রসুন, ডাটা জাতীয় খাবার পেটে
গ্যাস তৈরি করতে পারে। এর ফলেও বায়ু নির্গত হয়।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
গরু ও ছাগলের দুধে ল্যাকটোজ থাকে। আর
চিনির কারণে পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে। বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ
মানুষের শরীরে সহ্য হয় না। ল্যাকটোজেনে অ্যালার্জি থাকলে অনেকেই সেটা বুঝতে পারেন না।
তাই দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার ফলে তাদের শরীর ফুলে যায় ও পেটে গ্যাস হয় বা অস্বস্তিবোধ
তৈরি হয়।
গম ও শস্যজাতীয় খাবার
গ্যাস তৈরির ফ্রকটন ও ফাইবার পাওয়া
যায় শস্যজাতীয় খাবারে যেমন- ওটস ও গমের পণ্যে। ফলে রুটি, পাস্তা এবং শস্যজাতীয় খাবারগুলো
গ্রহণ করার পর কিন্তু বায়ু নির্গত হতে পারে। এছাড়া গম, বার্লি এবং দানাজাতীয় খাবারে
প্রায়ই গ্লটেন থাকে। আপনি গ্লটেন সমৃদ্ধ খাবার খেলে গ্যাস, ফুলে যাওয়া এবং অস্বস্তি
অনুভব করতে পারেন।
ব্রকলি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি
ব্রকলি, ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন
সবুজ সবজিতে প্রচুর পলিস্যাকারাইড ফাইবার থাকে। আর এ কারণে এসব সবজি হজম হতেও সময় লাগে।
অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া শক্তির জন্য এসব ফাইবার ব্যবহার করতে ভালোবাসে। এই কারণে পাকস্থলিতে
হালকা গ্যাস তৈরি হতে পারে। এছাড়া অনেক সবজিতে সালফারও থাকে। সেসব খাওয়ার কারণেও হালকা
দুর্গন্ধের বায়ু নির্গত হতে পারে।
ফলমূল
আম, আপেল, নাসপাতির মতো ফলে প্রচুর
পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি অর্থাৎ ফ্রকটোজ থাকে। এছাড়া আপেল, নাসপাতিতে অনেক ফাইবার থাকে।
ফ্রকটোজের কারণে অনেকের পাকস্থলিতে হালকা গ্যাস তৈরি হতে পারে।
চুইং গাম
চুইং গাম চিবানোর সময় মাত্রারিক্ত বাতাস
গিলে ফেলতে পারেন। এটিও আপনার বায়ু নির্গত হবার কারণ হতে পারে।
বাদাম
বাদামও বায়ু নির্গত হবার একটি কারণ
হয়ে দাড়ায়, কারণ এটি আপনার পাকস্থলিতে মাত্রারিক্ত গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে।
বিব্রত পরিস্থিতির কথা ভেবে কি বায়ু ত্যাগ করা বন্ধ রাখা যায়?
ফলমূল, সবজিসহ শস্যজাতীয় খাবার খেলে
হালকা গ্যাস তৈরি হতে পারে। কিন্তু এসব খাবারে যে পুষ্টিগুণ আছে সেগুলো মানুষের শরীরের
জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফাইবারযু্ক্ত খাবার না খেলে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা
দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা একটা বড় ধরনের সমস্যা। সুষম খাবার গ্রহণ করে শরীর
সতেজ রাখা সবচেয়ে জরুরী। প্রত্যেক খাবারের পর পরিমাণমতো পানি খেলে শরীর সতেজ থাকে।
এছাড়াও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, খাবারের পর গ্রিন টি বা পুদিনা চা
বা মসলাযুক্ত চা খাওয়ার যেন হজমে সুবিধা হয় এবং পাকস্থলিতে জমা থাকা হালকা বায়ুও যেন
নির্গত হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের পানীয়তেও গ্যাস থাকে আর এগুলো যদি বেশি পরিমাণে গ্রহণ
করেন তাহলে ঢেঁকুর উঠতে পারে বা বায়ু নির্গত হতে পা রে। কোন ভাবে বায়ু যদি আপনার পাকস্থলিতে
জমে যায়, তাহলে তা ত্যাগ করতেই হবে।
বায়ু ত্যাগ করা নিয়ে কি আপনার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
বায়ু ত্যাগ করা নিয়ে আপনার উদ্বিগ্ন
হওয়া উচিত নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাবার হজমের সময় বহু ধরনের গ্যাস পেটে তৈরি হয়। সেগুলো
পেটে জমে থাকলেই ক্ষতি। বরং সেগুলো যদি বেরিয়ে যায়, তাহলেই লাভ। সেক্ষেত্রে পেটে চাপ
পড়লে নির্দ্বিধায় সেই গ্যাস বের করে দেয়া উচিত। পেটে খাবার হজম করার কাজে সাহায্য করে
যে সব ব্যাকটেরিয়া, সেসব ব্যাকটেরিয়াই এই গ্যাসের অনেকটাই তৈরি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে
যাদের হজম প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা থাকতে পারে। যারা খাবার খুব ভালো করে হজম করেন, পুষ্টিগুণ
পরো মাত্রায় গ্রহণ করেন তাদের পেটে বায়ুর উৎপাদনের মাত্রা বেশি। তাদের বায়ু ত্যাগের
পরিমাণও স্বাভাবিক। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হওয়া শারীরিক
সমস্যারও লক্ষণ হতে পারে। যদি অতিরিক্ত গ্যসের সমস্যা হয় ও বিষয়টি আপনার মনে উদ্বেগ
তৈরি করে, তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।