কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি এক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসা। 'কেমো' বলতে বুঝায় ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করার জন্য ওষুধের ব্যবহার। কেমোথেরাপি শরীরের দ্রুত বর্ধনশীল টিউমার কোষ ধ্বংস করে। এটি প্রতিটি ক্যান্সার রোগীর জন্য উপকারী নাও হতে পারে এবং কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির বিকল্প কি আসছে?
ক্যান্সার-এই একটি শব্দ মানুষের জীবন উল্টাপাল্টা করে দিতে পারে। নতুন এক রক্ত পরীক্ষায় ট্রায়াল পদ্ধতিটি ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধিটির চিকিৎসায় কেমোথেরাপির বিকল্প হিসেবে আসতে পারে। চলুন জেনে আসি কিভাবে এটি কেমোথেরাপির বিকল্প হতে পারে।
২০২২ সালের মার্চ মাসে, লন্ডনের এক লোকের অন্ত্রের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল, লোকটির নাম হচ্ছে বেন কুক। তবে তিনি কেমোথেরাপির পথ বেছে নেন নি।
বেন কুক বলেন," আমি কাজ থেকে একদিনও ছুটি নেইনি।"
ব্যাপারটি ছিল খুবই অবাক হওয়ার মতো। বেনের মতো রোগীদের সফল অস্ত্রপচারের পর সাধারণত শিরার মধ্য দিয়ে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, যাতে শরীরের কোথাও থেকে যাওয়া সব ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু তার ওপর নতুন ধরনের রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেছে তিনি পুরো ক্যান্সার মুক্ত। বিন লন্ডনে চুল কাটার একটি সেলুন চালান। কেমোথেরাপির বিষাক্ত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে তিনি বেঁচে গেছেন। কেমো চিকিৎসায় হাত ও পায়ের স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।
তিনি বলেন "আমাকে যদি কেমোথেরাপি করতে হতো, আমার মনে হয় না আমি কাজ চালিয়ে যেতে পারতাম। আমার যে হাত চিনচিন করে না, ঝি-ঝি ধরে না, সেটা আমার জন্য বড় আশীর্বাদ।"
রয়াল মার্সডেনে বেনের নিয়মিত পরীক্ষা চলছে। এদের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যের কয়েক ডজন হাসপাতালে নতুন এই রক্ত পরীক্ষার ট্রায়াল চলছে। এর ফলাফল যুক্তরাজ্য প্রতিবছর হাজার হাজার অন্ত্রীয় ক্যান্সারের রোগীর চিকিৎসা ধরন বদলে দিতে পারবে।
রয়াল মার্সডেন হাসপাতালের একজন পরামর্শক, ড. নওরিন স্টালিং বলেন, "আমাদের আশা এই ট্রায়াল থেকে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ দেখাবে যে, এমনকি স্টেজ-৩ পর্যায়ে ধরা পড়া অন্ত্র ক্যান্সার চিকিৎসাতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে, সার্জারির পর কেমোথেরাপির প্রয়োজন হবে না।"
নতুন এই রক্ত পরীক্ষা কিভাবে বলে দেবে যে ব্রেনের মতো রোগীরা এখন ক্যান্সার মুক্ত?
এই পরীক্ষা বলে দিবে শরীরের রক্ত স্রোতে কোথাও টিউমারের ডিএনএ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ ভেসে বেড়াচ্ছে কিনা। যদি কোথাও ক্যান্সার কোষ না থাকে তাহলে ক্যান্সার ফিরে আসার ঝুঁকি খুবই কম থাকবে। অন্ত্রের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর অস্ত্রপচার হয়েছে সুজান উইন্টারের। তিনি একজন শিল্পী। তাকেও কেমোথেরাপির বদলে এই রক্ত পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে।
সুজান উইন্টার বলেন, "আমি নিজেকে অসাধারণ ভাগ্যবান মনে করছি। আমি জানি কেমোথেরাপি কতটা বিষাক্ত, কতটা ভয়ংকরী চিকিৎসা। এটা নিতে হবে জানলে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত লাগে।"
ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি এখন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় এই ট্রায়াল যদি সফল হয় তাহলে প্রতিবছর হাজার হাজার রোগের জীবন যে বদলে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই।