পেটে কৃমি হওয়ার লক্ষণ
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে- বিশেষ করে শিশুদের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। কৃমি খুবই ক্ষুদ্র আকৃতির একটি পরজীবী প্রাণী। এটি মানুষের পাশাপাশি গরু, ছাগলের মতো গবাদি পশুর পেটের অন্ত্রে বাসা বেধে পুষ্টি শোষণ করে বংশ বিস্তার ঘটায়। কৃমির সাধারণত ২ আকৃতির হয়।
১. চ্যাপ্টা কৃমি
এটি ফুসফুস, অন্ত্র, কলিজা এমনকি রক্তেও
ঘুরে বেড়াতে পারে। কৃমির মুখের দিকে চোষক অংশ থাকে, যা আমাদের শরীরের পুষ্টি শোষণ করে এবং হুক থাকে, যা অন্ত্রে ঝুলে থাকতে সাহায্য করে।
সাধারণত এই কৃমিগুলো শামুক থেকে ছড়িয়ে পড়ে। শামুকের সংস্পর্শে থাকলে মানবদেহে এটি ছড়িয়ে পড়তে
পারে।
২. গোল কৃমি
এই কৃমিগুলো শরীরের মধ্যে ডিম পাড়ে।
এই মলের মাধ্যমে বের হয় এবং এক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত বাইরে বেচে থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরীপ অনুযায়ী,
একবিংশ শতাব্দীর শুরু দিকেও বাংলাদেশের ৮০% শিশু কৃমি দ্বারা আক্রান্ত ছিল।
কৃমি পরিবেশ থেকে কীভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে?
কৃমি সংক্রমণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে
রয়েছে- দূষিত পানি পান, পচা খাবার খাওয়া, হাত ঠিক মতো পরিষ্কার না করা খাবার গ্রহণ
ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের হার বেশি হবার কারণ তারা এই পরিচ্ছন্নতা তেমন
মেনে চলে না এবং শিশুরা সব কিছুই মুখে দেয়। তাছাড়া খালি পেটে হাটলে কিছু কৃমি পায়ের
তালু ভেদ করে প্রবেশ করে।
কৃমিতে আক্রান্ত হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়?
কৃমিতে আক্রান্ত হবার উপসর্গগুলো হলো-
১. মলদ্বার চুলকানো
২. অরুচি বা ক্ষুধা মন্দা হওয়া
৩. পেট ব্যথা করা
৪. বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া
৫. ওজন কমে যেতে পারে
৬. ডায়রিয়া হতে পারে
বাংলাদেশে ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর
কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পালিত হয়। এই কার্যক্রমের অধীনে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কৃমি নাশক ওষুধ দেয়া হয়। বর্তমানে
বাংলাদেশে কৃমি আক্রান্ত শিশুর হার ১০% এর কম।
কৃমিতে আক্রান্ত হলে করণীয় কী?
কৃমিতে আক্রান্ত হলে কৃমি নাশক খেতে
হবে। ডাক্তারের পরামর্শে, বাজারের কোনো অ্যান্টিহেলমেনথিক ওষুধ খেতে পারেন। এছাড়া যেহুতু
পুষ্টি অভাব দেখা দেয়, তাই পুষ্টকর খাবার বেশি খেতে হবে। আর রক্ত স্বল্পতা হলে সেটার
চিকিৎসা করতে হবে। পেটে কৃমির বিস্তার রোধে আনারস খাওয়া অনেক ভালো।
কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধ করবেন কীভাবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃমিতে আক্রান্ত হয়ে
চিকিৎসা নেয়ার থেকে সংক্রমিত হবার আগেই কৃমি প্রতিরোধ করাই কৃমি থেকে বাচার সর্বোৎকৃষ্ট
উপায়। এটি প্রতিরোধের কিছু উপায় হলো-
- হাত পরিষ্কার করে খাবার খাওয়া
- বিশুদ্ধ পানি পান করা
- বিশুদ্ধ খাবার খাওয়া
- স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করা
- খেলার মাঠে খালি পায়ে খেলাধুলা না করা
- গরু, ছাগলের মল থেকেও কৃমি ছড়িয়ে যায়, তাই বসত বাড়ির গবাদি পশুদের কৃমির সমস্যা থাকলে সেটির চিকিৎসা করানো