সম্প্রীতি বাংলাদেশে ঢাকার বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি ও গত মাসে চট্টগ্রামে বিস্ফোরণে কয়েকজনে হতাহত হওয়ার পর আবারো এই বিষয়টি নিয়ে অনেক উদ্যোগ ও আলোচনা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবনে বিস্ফোরণের অন্তত ছয়টি মূল কারণে রয়েছে।
বাসাবাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে যেসব কারণে:
১. জমে থাকা গ্যাস
সম্প্রীতি রাজধানী সাইন্স ল্যাব এলাকায় একটি ভবনের যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তাতে বলা হচ্ছে যে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে। পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল জানিয়েছে, কোন আবদ্ধ জায়গায় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ঘনমাত্রার গ্যাস থাকলে, বৈদ্যুতিক সুইচ শর্ট সার্কিট দিয়াশলাই কিংবা লাইটার সহজে কোন কিছু থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পরও বদ্ধ পাইপ লাইন ভবনে থেকে গেলে তাতে গ্যাস জমে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যত ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে না, তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে- আবদ্ধ জায়গায় গ্যাস জমে থাকা।
২. গ্যাস সিলেন্ডার বিস্ফোরণ
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাজারে রান্নার জন্য যেসব সিলিন্ডার বিক্রি হয়, সেগুলো নিরাপদ হলেও এই সিলিন্ডারগুলো যথাযথভাবে পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহার না করার কারণে বিস্ফোরণ হয়। সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ হয় মূলত গ্যাসের লিকেজ থেকে। হুঁজপাইপ( hosepipe) রেগুলেটর দুর্বল থাকার কারণে যেকোনো সময় গ্যাস লিকেজ হতে পারে। এই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে জমতে থাকে যা সামান্য আগুন এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসার সাথেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, সাধারণত একটি সিলিন্ডারের ব্যবহারের মেয়াদ থাকে ১০ থেকে ১৫ বছর। এর চেয়ে বেশি সময় পর কোন অবস্থাতেই সিলিন্ডার ব্যবহার করা যাবে না। সিলিন্ডার রেগুলেটর পাইপ কেনার সময় সত্যায়িত সার্টিফাইড কোম্পানি ও অনুমোদিত বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা উচিত।( বিশেষজ্ঞ মেজর একে শাকিল নাওয়াক বলেন, "টাকা বাঁচাতে গিয়ে কোনভাবেই মানসম্মত নয় এমন ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার ক্রয় করা উচিত নয়।")
৩. গ্যাস লাইনে ত্রুটি
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জে একটি মসজিদে বিস্ফোরণে ৩০ জনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, গ্যাসের লাইনে লিকেজ থেকে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ সময় যাবত গ্যাস লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ না করায়, অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ নেওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান মিথেন বাতাসের অন্য উপাদানের তুলনায় হালকা হওয়ার কারণে উপরের দিকে উঠতে থাকে। ফলে পাইপলাইন লিকেজ হলে সেখান থেকে গ্যাস বাহির হয়। এই কাজ বদ্ধ পরিবেশ পেলে সেখানে জমা হয় এবং পরবর্তীতে বিস্ফোরিত হয়।
৪. এসি থেকে বিস্ফোরণ
বাংলাদেশে, বিশেষ করে শহর অঞ্চলে এসি থেকে বিস্ফোরণ এর ঘটনা প্রায় শোনা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নানা কারণে এসি বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- এসি দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে, পুরনো বা নিম্নমানের এসি ব্যবহার
- রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক ক্ষমতার এসি ব্যবহার না করা
- কম্প্রেসারের ভেতরে ময়লা আটকিয়ে জ্যাম তৈরি করা
- এসি থেকে গ্যাস লিক হয়ে রুমে বা এসির ভেতরে জমে থাকা
- দীর্ঘক্ষণ এসি চালানোর ফলে প্রেশার বেড়ে সেটিকে গরম করে তোলা
- এসির ভিতরে বা বাইরে বৈদ্যুতিক তার নড়বড়ে হয়ে থাকা
- অনেকদিন এসির সার্ভিসিং না করা।
৫. পয়ঃনিষ্কাশন লাইনে গ্যাস জমা
সাইন্স ল্যাব এলাকায় বিস্ফোরণের জন্য যেসব বিষয়কে দায়ী বলে মনে করা হয়েছে, তার মধ্যে আরেকটি হচ্ছে পয়ঃনিষ্কাশন এর নালা থেকে নির্গত গ্যাস। পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল সন্দেহ করছে যে, পয়ঃনালা থেকে নির্গত গ্যাস শৌচাগারের পাইপ দিয়ে উপরে উঠে কোন স্থানে জমতে পারে। এটি থেকে পরবর্তীতে বিস্ফোরণ করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাসা বাড়িতেও এই ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষ করে পয়ঃনিষ্কাশনের ট্যাংকে দাহ্য গ্যাস জমা হলে সেখানে স্ফুলিঙ্গের উপস্থিতিতে বিস্ফোরিত হতে পারে। অনেক সময় সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করার সময় সেখানে গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে গিয়ে বিস্ফোরণ হয়। এই কারণে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারের প্রশিক্ষণ রয়েছে তাদের, এমন লোক দিয়ে পরিষ্কার করানো প্রয়োজন।
৬. পানির ট্যাংকে বিস্ফোরণ
২০১৮ সালের মার্চে, মিরপুরে একটি বাসার পানির রিজার্ভ ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে বিস্ফোরণে কয়েকজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। মারা যাওয়ার ফলে পানির ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনাটি আলোচনায় আসে। তখন ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছিল, পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার সময় সেখানে গ্যাস জমে আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য- মোমবাতি জ্বালিয়ে ভিতরে দিলে বিস্ফোরণ হবে।
বর্তমানে ট্যাংক পরিষ্কার করার সময় বিশেষ পদ্ধতিতে একদিক দিয়ে জমে থাকা গ্যাস বের করে দেয়া হয় এবং অন্যদিক দিয়ে বাতাস প্রবেশ করা হয়। ফলে ট্যাঙ্কের দাহ্য গ্যাসের মাত্রা কমে আসে এবং সেটি নিরাপদ হয়। তাই ট্যাংক পরিষ্কার করার সময় দক্ষ কর্মী নিয়োগ করাটাও জরুরী।