ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কী? জেনে নিন ডিপ্রেশনের ৯ টি লক্ষণ
ডিপ্রেশন কি?
পারিপার্শিক অবস্থা, দূশ্চিন্তা, একঘেয়ে
জীবন, নিজেকে নিয়ে হীন মন্যতায় ভোগা এসব যখন মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তখন দেখা বিষণ্ণতা
বা ডিপ্রেশন। তবে অনেকেই এটাকে কেবল মন খারাপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন। কিন্তু বিজ্ঞানীদের
ভাষায়, মন খারাপ বা কোনো কিছু নিয়ে দুঃখ প্রকাশ মানেই ডিপ্রেশন নয়। তবে মন খারাপ হওয়াটাকে
ডিপ্রেশনের বা মানসিক অবসাদের প্রথম ধাপ বলা যেতে পারে। যা ধীরে ধীরে আপনাকে গ্রাস
করে ফেলে। আর ঠেলে দেয় মানসিক ব্যাধির দিকে।
ডিপ্রেশন এর কবলে যে বা যারা পরেছেন
তারাই জানেন এর ভয়াবহতা। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা নিয়ে হতাশার চরম পর্যায়ে পৌছালে
যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে এই রোগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০৩০ সাল নাগাদ
বিশ্বে আর্থোসামাজিক ক্ষেত্রে বড় সংকটের সৃষ্টি করতে যাচ্ছে এই বিষণ্ণতা। তারা এক জরিপে
বলেছেন, নিম্ন আয় বা মধ্যম আয়ের দেশে বসবাসকারী ৭৫% শতাংশের বেশি মানুষ বিষণ্ণতার চিকিৎসা
নিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে সব রোগের মতো এই রোগেরও চিকিৎসা রয়েছে।
ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো কি কি?
আমেরিকার সাইক্রিয়াটিক এসোসিয়েশন ডিপ্রেশনের
৯টি লক্ষণ চিহ্নিত করেছেন। এ লক্ষণগুলো ২ সপ্তাহ বা এর চেয়ে বেশি সময় ধরে আপনার মধ্যে
থাকলে ধরে নিতে হবে আপনিও মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছেন। এ লক্ষণ ৯টি হলো-
১. অল্পতে রেগে যাওয়া
২. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
৩. পছন্দের কাজে অনীহা হয়ে ওঠা
৪. সব সময় বিরক্তি বা অস্থিরতা কাজ
করা
৫. দীর্ঘ সময় মন খারাপ থাকা
৬. নিজেকে গুটিয়ে ফেলা বা আড়াল করে
ফেলা
৭. খাবারে অুরুচি হওয়া বা ক্ষুধা কমে
যাওয়া
৮. ধীরে ধীরে ওজন কমে যাওয়া
৯. জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
বা নিজেকে ক্ষতি করার প্রবণতা তৈরি হওয়া।
ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ লক্ষণটি
সব থেকে ভয়ংকর এবং মারাত্নক।
ডিপ্রেশনে কি কি ক্ষতি হতে পারে?
গবেষক ও চিকিৎসকরা মনে করেন, সাধারণভাবে
প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন তার জীবনে কখনো ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়েছেন। এবং তাদের মধ্যে
১৫% মানুষের মধ্যে আত্নহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।
ন্যাশনাল
ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ
এর মতে, ডিপ্রেশন যে শুধু আপনার মনের ক্ষতি করবে তা কিন্তু নয়। এটি আপনার দেহের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হৃৎরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, পেটের সমস্যা,
আলসার, আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের সম্ভবনাও বেড়ে যায়।
কি কি কারণে আপনি ডিপ্রেশনে চলে যেতে পারেন?
ডিপ্রেশন হতে পারে বিভিন্ন কারণে ও
বিভিন্ন মাত্রায়। সাধারণত টানা ২সপ্তাহ মন খারাপ থাকা বা আগে যে সব কাজে আনন্দ লাগতো,
সেসব স্বাভাবিক কাজে আর আনন্দ না লাগলে এটিকে ডিপ্রেশনের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতে
হবে। মনোবিজ্ঞানী ডা. মোহিত কামাল বলেছেন, ”বিষণ্ণতা রোগে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামের
এক জৈব পদার্থ আছে তা কমে যায়। যখন সেরোটোনিন বেড়ে যায়, সেটাকে বলা হয় সেটাকে বলা হয়
ম্যানিয়া। আর সেরোটোনিন কমে গেলে হয় বিষণ্ণতা।” প্রাপ্ত বয়স্কদেরই এই রোগে আক্রান্ত
হতে বেশি দেখা যায়। তবে পারিপার্শিক অনেক কারণে যেকোন বয়সী মানুষ এই রোগে আক্রান্ত
হতে পারে। তবে শিশু-কিশোরদের মধ্যেও এই রোগে আক্রান্ত হবার সুযোগ বেশি। যেমন প্রেমে
ব্যর্থতার কারণে অনেকেই এই সমস্যায় আক্রান্ত হন। তাই এ ধরনের সমস্যায় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন শিশু-কিশোরদের মানসিক সহায়তা জরুরী।
কিভাবে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে পারবেন?
সবকিছুর মতো বিষণ্ণতারও ধরন রয়েছে।
মৃদু বিষণ্ণতা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। আবার অল্প হলে কারো সাথে শেয়ার করা বা সামাজিক
মিথস্ক্রিয়া বাড়ালেই কাজে লাগে। মানুষের থেকে দূরে সরে না গিয়েও ডিপ্রেশন কিছুটা কাটিয়ে
উঠা সম্ভব। বিষণ্ণতায় নিজেকে সব সময় পজিটিভ চিন্তায় রাখতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে।
পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে বেশি সময় কাটানো যেতে পারে। এটি থেকে পরিত্রাণের
জন্য শারীরিক পরিশ্রম বা শরীর চর্চা করতে হবে। দৈনিক ৩০ মিনিট হাটা স্বাস্থ্যের জন্য
খুবই ভালো। কিন্তু কেউ যদি বাহিরে যেতে না পারে তবে যেন ঘরের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে,
কারণ এতেও উপকার রয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, একজন মানুষ যতটা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকবে
ততটাই তার সমস্যা কাটবে। আবার মেডিটেশনও খুব কার্যকরী। এটি আপনার মনকে প্রশান্তি দিবে
সাথে মাংশপেশীকে শিথিল রাখবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিকভাবে দৃঢ় থাকা ও মনের মধ্যে আত্নবিশ্বাস রাখা। আর মনের প্রশান্তির জন্য প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা শ্রেয়। একই সাথে নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম শরীরে ক্লান্তি দূর করে মনকে প্রফুল্ল রাখবে। এক্ষেত্রে খাবারের দিকটাকেও বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত। পরিমিত সুষম খাদ্য, ফলমূল, শাক-সবজি, প্রোটিন খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। যতটা সম্ভব তেলে ভাজা খাবার পরিহার বা ঝাল, শর্করা, চর্বি জাতীয় খাবার এবং সাথে সিগারেট, কফি, অ্যালকোহল ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। বিষণ্ণতা অনেকটা নিরাময় যোগ্য। তাই কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন-যাপন করলে এ থেকে সহজেই উত্তরণ করা সম্ভব।