পারমাণবিক যুদ্ধ কি অনিবার্য? কত কোটি মানুষ মারা যাবে?
প্রায় ছয় কোটি বছর আগে বিশাল এক গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীর বুকে। যে গ্রহাণুর আঘাতে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ডাইনোসরের মতো অতিকার প্রাণীরা এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল পৃথিবী। সে অবস্থা থেকে ফিরে আসতে কোটি কোটি বছর সময় লেগে গিয়েছিল। বিজ্ঞানের উত্থানে মানুষও গ্রহণ করেছে প্রবল শক্তি। তবে, গ্রহাণুর আঘাত নয়, মানুষের তৈরি পারমাণবিক বোমা এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সবুজ এই গ্রহটির জন্য।
২৫ মার্চ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন, বেলারুশের পারমানবিক অস্ত্র মোতায়েনের। এর এক সপ্তাহ পরে জাতিসংঘ থেকে বলা হয়, স্নায়ুযুদ্ধের পর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে পৃথিবী। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই বৈশ্বিক পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা, সে দিকেই ধাবিত হচ্ছে বিশ্ব।
- সর্বাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধ হলে কি পরিণতি হবে?
- পৃথিবীতে কতগুলো পারমাণবিক বোমা রয়েছে?
ফেডারেশন অফ আমেরিকান সাইন্টিস্ট এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে প্রায় বারো হাজার পাঁচশো সক্রিয় পারমাণবিক বোমা রয়েছে। রাশিয়ার কাছে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫৮৮৯টি পারমাণবিক বোমা, যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে ৫২৪৪ টি, এছাড়াও চীনের ৪১০টি, ফ্রান্সের ২৯০টি এবং যুক্তরাজ্য ২২৫টি, পাকিস্তান ১৭০টি, ভারত ১৬৪টি, ইসরাইল ও উত্তর কোরিয়া যথাক্রমে ৯০টি এবং ৩০ টি পারমাণবিক বোমা নিয়ে প্রস্তুত। অনেকের ধারণা, এর বাইরেও কয়েকটি দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
পারমাণবিক বোমা ঠেকানোর কি কোন উপায় আছে?
আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক মিসাইল বা ICBM হচ্ছে পারমাণবিক বোমা হামলার মুখ্য অস্ত্র। সাবমেরিন থেকেও ব্যালেস্টিক মিসাইল ছুড়ে বোমা হামলা সুযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার তৈরি এন্টি ব্যালেস্টিক মিসাইল দিয়ে এসব আইসিবিএম রুখে দেয়া অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন। আর আকাশে মিসাইলটি ধ্বংস করা গেলেও ওয়ার হেডে ইউরেনিয়াম ও প্রোটোনিয়াম এর মত তেজস্ক্রিয় পদার্থ ভূখণ্ডের ছড়িয়ে পড়া শঙ্কা থেকেই যায়। আরেকটা বিষয় হলো, যখন যাকে যাকে মিসাইল বিভিন্ন দিক থেকে আঘাত হানতে যাবে তখন আকাশ প্রতিরক্ষা কাজে আসবে না। অর্থাৎ সর্বাত্মক পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার কারো উপায় নেই।
কত কোটি মানুষ মারা যাবে?
পৃথিবীর কিছু এলাকাকে পরমাণু যুদ্ধের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলে ধরা হয়। ANTERCTICA মহাদেশ তেমনি একটি স্থান যেখানে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি সবচেয়ে কম। কারণ, পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার্থে ১৯৫৯ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে এই অঞ্চলটিতে সব ধরনের সামরিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর সবচেয়ে নিরাপদে স্থান হিসেবে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে ধরা যেতে পারে । বৈশ্বিক রাজনৈতিক টানা-পরনের কেন্দ্রে থাকা দেশগুলো থেকে অনেক দূরে হয় এই দেশ দুটিতে পরমাণু হামলা হবার সম্ভাবনা কম।
ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের প্রতিটি বাড়িতে পরমাণু বাম্পার থাকা বাধ্যতামূলক। স্নায়ু যুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা হামলার ঝুঁকির প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয় সুইজারল্যান্ড। এই বাড়তি প্রস্তুতি থাকতে বোমা হামলার প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে দেশটি। তবে এসব আলোচনার পুরোটাই হল পরমাণবিক বোমা হামলা প্রত্যক্ষ প্রভাব নিয়ে। কিন্তু আসল সর্বনাশটা হবে পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে। সর্বাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধে কি পরিমান ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে গবেষকরা গবেষণা করেছেন। নেচার জার্নালে আগস্ট মাসের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, এমন যুদ্ধে জড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে ৩৬ কোটি মানুষ মারা যাবে।
সর্বাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধ হলে কি পরিণতি হবে?
বিস্ফোরণের সৃষ্টি তো আগুনে ৩ কোটি ৭ লাখ টনের বেশি কার্বন নিঃসরণ হবে যা কয়েক সপ্তাহ এর মধ্য গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। কার্বনের স্তরটি এতটাই পুরু হবে যে, কার্বনের স্তর সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে পারবে না দীর্ঘসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকবে পৃথিবীর অনেক অংশে। সূর্যে আলো আশা না ফলে এর তাপমাত্রা প্রায় ৯ ডিগ্রি কমে যাবে, কমবে জলীয় বাষ্প। বৃষ্টি পাতা কমে যাবে ৩০ শতাংশ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দেবে যার প্রভাবে মৃত্যু ঘটবে প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে যদি ভারত ও পাকিস্তান এমন যুদ্ধে জড়ায় তাহলে এর পরিবর্তে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ প্রাণ হারাবে বলে মনে করে গবেষকরা। এ থেকে রেহাই পাবে না বাংলাদেশ।