পানামার কুনা নামের এক প্রদেশের মানুষজন প্রচুর পরিমাণে ডার্ক চকলেট খায়। সেই অঞ্চলের মানুষদের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, তাদের ইউরিনে প্রচুর ফ্লাভানল থাকে এবং তাদের ক্যান্সার ও হৃৎরোগ হবার সম্ভবা অনেক কম থাকে। আসলেই কি এই চকলেট তাদের এমন স্বাস্থ্যের জন্য দায়ী? চলুন ডার্ক চকলেটের উপকারিতাগুলো জেনে আসি।
চকলেট কি স্বাস্থ্যকর হতে পারে?
চকলেট মানেই যে শুধু খারাপ তা নয়। ডার্ক চকলেট এই ধারণা বদলে দিয়েছে। চকলেটও স্বাস্থ্যকর হতে পারে, কিন্তু এর মাত্রা ও ধরনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ডার্ক চকলেট (যাতে ৫০-৯০% কোকো পাউডার থাকে) হল সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পছন্দ।
ব্লাক চকলেট সম্পর্কে এখন এমন এক গবেষণা এসেছে যে, এই চকলেট শরীরের জন্য অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যকর।
ডার্ক চকলেটে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে?
ডার্ক চকলেট কোকো বীজ থেকে তৈরি হয়। খ্রিষ্ট
জন্মের বহু বছর আগে কোকো বীজ মূদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই চকলেটের প্রতি ১০০ গ্রাম
বারে ৬০০ ক্যালরি থাকে (তাই এটি সাবধানে খেতে হবে- কারণ এতো ক্যালরি শরীরের জন্য ভালো
নয়), ১১ গ্রাম ফাইবার, ৬৭ গ্রাম আয়রন থাকে (মানব দেহের প্রয়োজনীয়তার ৭০%), এছাড়া জিংক,
ফসফেট, প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, কপার ও পটাসিয়াম থাকে (পটাসিয়াম রক্তচাপ কমাতে
সাহায্য করে), ফসফেট সেলিনিয়াম, ক্যাফেইন ও ফ্লাভানল থাকে। তার মানে বুঝতেই পারছেন, এটিতে অনেক পুষ্টিযুক্ত
উপাদান থাকে, সাথে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বা প্রদাহ নিরুদক।
ডার্ক চকলেট কতটা উপকারী?
ডার্ক চকলেটের প্রধান কিছু উপকারিতা আলোচনা করলাম।
১. এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
২. রক্ত শূন্যতা কমায়
৩. মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশন কমায়
৪. হৃৎরোগের ঝুঁকি কমায়
৫. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তারুণ্যতা
ধরে রাখতে সাহায্য করে
৬. ফ্লাভানল থাকায় রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়
৭. এছাড়া স্টিমুলেন্ট থাকায় ডার্ক চকলেট
খাওয়াতে ভালো লাগা কাজ করে এবং শরীর উজ্জীবিত মনে হয়
৮. ভালো কোলস্টেরল বাড়িয়ে দেয়, সাথে খারাপ
কোলস্টেরল কমিয়ে দেয়।
প্রতিদিন কতটুকু ডার্ক চকলেট খাবো?
অনেক বেশি ক্যালরি থাকায়,
সপ্তাহে তিন দিন একটা চকলেট বারের একটা কিউব খেলেই শরীরের জন্য যথেষ্ঠ। পানামায় ডার্ক চকলেটের সহজলভ্যতার গল্প
ডার্ক চকলেটের পুরোটাই আসে Mayamei Cacao নামের চকলেট কোম্পানি থেকে। জঙ্গলের মাঝে বেড়ে ওঠা কোকো দিয়ে চকলেট তৈরি করেন মেইভিস অর্টিস(Meivis Ortiz)। পানামার জঙ্গলের মাঝে তার কারখানা। স্বাস্থ্যকর চকলেট কিভাবে তৈরি করতে হয় সেই পন্থা জানিয়েছেন অর্টিস। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে এবং ন্যায্য মজুরির ভিত্তিতে সেখানে কোকো চাষ করা হয়।
মেইভিস অর্টিস বলেছেন, "আমরা দেখাতে চাই চকলেট শুধু কোন মিষ্টি নয় বরং কোকো গাছ দিয়ে তৈরি চকলেট সুস্বাস্থ্য ও স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসে।"
জঙ্গলের মাঝেই এই কোকো গাছ বেড়ে ওঠে, তার জন্য কোন আলাদাভাবে চাষ করতে হয় না বা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। এমন প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতি কোকো বিশেষজ্ঞ মেইভিস অর্টিসের মনে ধরেছিল। পাঁচ বছর আগে খুব কাছেই তিনি চকলেট কারখানা গড়ে তোলেন। তিনি শুধু সবচেয়ে সেরা মানের অর্গানিক কোকো ব্যবহার করতে চান বলেই সলেদারদের রিশগোর কোকো চাষীদের সহযোগিতা করছেন। জঙ্গলের মধ্যে ঐতিহ্যগত চাষ করে যে কোকো পাওয়া যায়, একমাত্র সেটির মানই অর্টিসের কঠিন চাহিদা পূরণ করতে পারে।
ঝরে পড়া পাতায় মাটি সংরক্ষণ করে এবং কোন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না বলে, সেটি মানুষের জন্য অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কোকো গাছের উপর খুব বেশি ছায়া না পড়ায় ভালো ফলন হয় এবং অর্গানিক পদ্ধতিও সার্থক হয়।
কোকো গাছের মাঝে বিরল গাছপালা এবং পানামার সবচেয়ে বড় আদিবাসী গোষ্ঠীর ঔষধি ও উপাসনার জন্য প্রয়োজনীয় লতাপাতার মূল গজিয়ে ওঠে। তবে বড় আকারের কোকো উৎপাদন বেড়ে চলার ফলে, পুরনো কৃষি পদ্ধতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। অরণ্যে কৃষিকাজ নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুবাদে মেলভিস অর্টিস সেই প্রবণতা কিছুটা হলেও কমাতে চান। সেজন্য তিনি কোকো চাষীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেন। এইভাবে তিনি চাষের কাজে আরো উন্নতি এনে কোকোভিঞ্চ এর মান আরো বাড়াতে চান। এবং তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাইভিস আর্টিস নিজের কোম্পানির মাধ্যমে আদিবাসী নারীদের চাষীদের সাহায্য করতে চান। নিজস্ব আয় এর পথ খুলে দিয়ে স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরতা কমাতে চান। সেজন্য তিনি কোকোর আঞ্চলিক দাম অনুযায়ী ৬০% বেশি দামে কোকো কেনেন। নারীরাও এমন উদ্যোগের ফলে খুশি।
অর্টিস গাছেই কাঁচা কোকো প্রক্রিয়াজাত করেন। প্রথমে কয়েকদিন ধরে গাঁজনের পর সেগুলি শুকাতে হয়, এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর Mayamei Cacao নামের চকলেট কোম্পানি আঞ্চলিক পর্যায়ে উচ্চমানের চকলেট উৎপাদনের ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করতে চাই। অর্টিস অনলাইন পদ্ধতিতে এবং পানামার বিভিন্ন বাণিজ্য মেলা এবং অনুষ্ঠান ও দোকানে সেই চকলেট বিক্রি করেন। তার কাছে চকলেট মিষ্টি নয় বরং স্বাস্থ্যকর উপাদান ভরা এক খাদ্য।
Mayamei Cacao ছাড়া অন্য অনেক কোম্পানি প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতি এবং যতটা কম সম্ভব চিনি ব্যবহার করছে। গত পাঁচ বছরে পানামার ছোট কোম্পানি উচ্চমানের স্বাস্থ্যকর চকলেট উৎপাদন করছে।