স্বাস্থ্য টিপস: গরমের মাঝে রোজায় পানি শূন্যতা এড়াতে কি কি খাবেন?
রোজার সময়ে মুসলিমদের দীর্ঘক্ষণ পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। আর গরমের মৌসুমে রোজা রাখলে পানিশূন্যতায় ভোগার আশঙ্কা বেশি থাকে। চিকিৎসকরা মনে করেন, পানি শূন্যতার কারণে হার্ট রেট কিংবা প্রেশার কমে গিয়ে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া পানির অভাবে- জিহ্বা শুকিয়ে যায়, অনেকের চোখ গর্তে চলে যায়, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে থাকে, শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন,”যারা রোজা রাখেন তাদের যেন কোনো ভাবে পানিশূন্যতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে বয়স্কদের। এক্ষেত্রে যথেষ্ট পানি পানের কোনো বিকল্প নেই।”
- পুষ্টিবিদ রুবাইয়া রীতি বলেছেন, ”একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি প্রয়োজন। রোজা রাখলে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই পরিমাণ পানি পান করতে হবে। তবে সেই পানি হতে হবে স্বাভাবিক তাপমাত্রার। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়া মোটেও ঠিক নয়।”
গরমের মাঝে রোজায় পানি শূন্যতা এড়াতে যে খাবারগুলো খাবেন
শাক-সবজি
সেহরি ও ইফতারে বিভিন্ন মৌসুমী ফল ও বিভিন্ন সবজি যোগ করতে পারেন। সবজির মধ্যে রয়েছে-
- সবুজ শাক
- লাউ
- কুমড়া
- মুলা
- ঝিঙ্গা
- চিচিঙ্গা
- বরবটি
সেই সাথে পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, শশা, টমেটো, পুদিনা, লেবুও অনেক উপকারে আসবে।
ফল-মূল ও পানীয়
পুষ্টিবিদরা বলছেন, মৌসুমী ফলের মধ্যে রয়েছে- আম, পেপেঁ, বাঙ্গি, তরমুজ, জাম্বুরা, ডালিমের মতো ফল খাওয়া যাবে। আর এসব ফলের শরবত- ডাবের পানি, লেবুর শরবত, জিরাপানি বা অ্যালোভেরার শরবত খেতে পারেন। এসব খাবারে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় শরীর দীর্ঘ সময় আর্দ্র থাকে। পুষ্টিবিদরা আরও বলেছেন, এসব খাবার সহজে হজম হয়।
মাছ-মাংস, দুধ, ডাল ও অন্যান্য
পুষ্টিবিদরা বলছেন, সারাদিনের ক্যালরি ঘাটতি মেটাতে খেজুর, অঙ্করিত ছোলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল, ভুট্টা, মাংসের স্যুপ, হালিম, চিড়া, দুধ, দই, সামদ্রিক মাছ ইত্যাদি খেতে পারেন। এসব খাবার শরীরে শক্তির সঞ্চয় করে এবং পানিও ধরে রাখে।
কিন্তু কিডনির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে খাবার নির্বাচন করতে হবে।
চা-কফি
ইফতারের পর অতি মাত্রায় চা-কফি খেলেও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। যদি খেতেই হয়, তাহলে পরিমিত র-চা খাবার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।
যে খাবার এড়িয়ে চলবেন
অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মসলাদার খাবার, অতিরিক্ত চিনি, লবণযুক্ত খাবার, কোমল পানিয় বা এনার্জি ড্রিংগস খেলেও পানি শূন্যতা হতে পারে এবং পেটে গ্যাস হবার আশংকাও থাকে। তাই রমজান মাসে এসব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
কতটুকু খাবেন
অনেকেই ইফতারের পর আর খেতে চান না। এটি ঠিক নয়। রাতের খাবার ও সেহরি খেতে হবে পরিমিত মাত্রায়। তাহলে পানির ঘাটতি কম হবে। আবার দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হবে দেখে অনেকে সেহরির সময় প্রচুর খাবার খেয়ে থাকেন। কিন্তু এতে শরীরে পানিশূন্যতার ঝুকি বেড়ে যায়। কারণ, এই অতিরিক্ত খাবার হজম করতে পাকস্থলি সারাদিন ধরে শরীর থেকে পানি শোষন করতে থাকে। তাই খাবার নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে।
অন্যান্য সতর্কতা
আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী। যেমন- অতিরিক্ত রোদ বা গরমে থাকলে ঘামের কারণে প্রচুর পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাই রোজার সময় রোদ ও অতিরিক্ত কায়িক শ্রম এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তবে শরীর ফিট রাখতে নিয়মিত গোসল, চোখে-মুখে পানি বারবার দেবার পরামর্শ দেয়া হয়। এরপরেও শরীরে দূর্বল লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।