জেনে নিন- রমজানে রোজা যখন রাখলে আপনার শরীরে কী ঘটে
মুসলিমরা প্রতি বছর পুরো রমজান মাসে সূর্য উঠা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজা রাখেন। বিগত কয়েক বছর ধরে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে গ্রীষ্মকালে রোজার সময় শুরু হচ্ছে। এই কারণে এসব দেশের মুসলিমদের গরমের মধ্যে অনেক সময় ধরে রোজা রাখতে হচ্ছে। কিন্তু মুসলিমরা একমাস ধরে রোজা রাখলে তাদের শরীরে কি কোনো উপকারী প্রভাব পড়ে, সেটি সম্পর্কে কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য ও কিছু স্বাস্থ্য টিপস আজকে জেনে আসি।
প্রথম কয়েকদিন অত্যন্ত কষ্টকর
শেষ বার খাবার খাওয়ার পর ৮ ঘন্টা পার
না হওয়া পর্যন্ত মানুষের শরীরে রোজার প্রভাব পড়ে না। আমরা যে খাবার খাই তা পাকস্থলীতে
পুরোপুরি হজম হতে এবং এর শরীর এর পুষ্টি শোষন করতে সময়ে নেয় ৮ ঘন্টা। যখন এই খাদ্য
পুরোপুরে হজম হয়ে যায়, তখন শরীর যকৃৎ এবং মাংসপেশিতে থাকা Glucose শক্তি নেয়। শরীর
যখন এই চর্বি খরচ করতে শুরু করে, তা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরলের
মাত্রা এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। তবে যেহুতু রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা কমে
যায়, তাই কিছুটা দুর্বল এবং ঝিমুনি ভাব আসতে পারে। এছাড়া অনেকের মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা,
বমি বমি ভাব বা নিশ্বাসে দূর্গন্ধ হতে পারে। এই সময়টাতে শরীরে সবচেয়ে বেশি ক্ষুধা লাগে।
৩ হতে ৭ রোজাতে পানিশূন্যতা থেকে সাবধান
প্রথম কয়েকদিনের পর শরীর রোজায় অভ্যস্ত
হয়ে উঠলে, শরীরের চর্বি গলে গিয়ে তা রক্তের শর্করায় পরিণত হয়। কিন্তু রোজার সময় দিনের
বেলায় যেহুতু আপনি কিছু খেতে বা পান করতে পারছেন না তাই রোজা ভাঙ্গার পর অবশ্যই পানিরঘাটতি পূরণের জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে গরমের দিনে যদি আপনার শরীরে
ঘাম হয় আর আপনি যথেষ্ট পানি পান না করেন তাহলে মারাত্নক পানি শূন্যতা তৈরি হতে পারে।
আর যে খাবার আপনি খাবেন সেটাতেও যথেষ্ট শক্তিদায়ক পুষ্টি উপাদান থাকতে হবে, যেমন- কার্বহাইড্রেট
বা শর্করা এবং চর্বি।
একটা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যেখানে সব ধরনের পুষ্টি এবং প্রোটিন বা আমিষ, লবণ এবং পানি থাকবে। এই পর্যায়ে এসে আপনার
শরীর ও মনে ভালো লাগা তৈরি হয়, কারণ তখন রোজার সঙ্গে শরীর মানিয়ে নিতে শুরু করে। ক্যামিব্রিজের
এডেনব্রুগস হাসপাতালের (Addenbrooke’s Hospital) অ্যানাছথেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার
মেডিসিনের কনসালটেন্ট, ডা: রাজিন মাহরুফ
বলেন, সাধারণত আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খাই। এর ফলে আমাদের
শরীর অনেক কাজ ঠিক মতো করতে পারেনা। যেমন- শরীর নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারেনা।
রোজার সময় যেহুতু আমরা উপোস থাকছি, তাই শরীর তখন অন্যান্য কাজের দিকে মনোযোগ দিতে পারে।
কাজেই রোজা কিন্তু শরীরের বেশ উপকারী। এটি শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলা বা সংক্রমণ রোধে
সাহায্য করতে পারে।
১৬ থেকে ৩০ রোজাতে ভারমুক্ত শরীর
রমজান মাসের দ্বিতীয়ার্ধে শরীর পুরোপুরি
রোজার সঙ্গে মানিয়ে নেয়। আপনার শরীরের পাচকতন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি এবং দেহত্বক এসময় এক
ধরনের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাবে। সেখান থেকে আপনার শরীরের সব দূষিত বস্তু বেরিয়ে যাবে
এবং আপনার শরীর শুদ্ধ হয়ে উঠবে।
ডা: রাজিন মাহরুফ বলেন, এ সময় আপনার
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পাবে। আপনার স্মৃতি এবং মনোযোগের
উন্নতি হবে এবং আপনি যেন শরীরে অনেক শক্তি পাবেন।
শরীরে শক্তি যোগানোর জন্য আপনার আমিষের
উপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হবে না। যখন আপনার শরীর ক্ষুধার্ত থাকছে, তখন এটি শক্তির জন্য
আপনার শরীর মাংসপেশিকে ব্যবহার করছে। এটি ঘটে যখন একটানা বহুদিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে
আপনি উপোস থাকছেন বা রোজা রাখছেন। যেহুতু রোজার সময় কেবল দিনের বেলাতেই না খেয়ে রাখতে
হয়, তাই আমাদের রোজা ভাঙার পর শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট খাবার এবং তরল বা
পানীয় গ্রহণের সুযোগ থাকছে। এটি আমাদের মাংশপেশিকে রক্ষা করছে এবং একই সঙ্গে আমাদের
ওজন কমাতে সাহায্য করছে।
রোজা রাখা কি স্বাস্থের জন্য ভালো?
ডা: মাহরুফ বলেন, রোজা রাখা শরীরের
জন্য ভালো কারণ আমরা কি খাই এবং কখন খাই সেটার ওপর আমাদের মনোযোগ দিতে সাহায্যে করে।
এক মাস রোজা রাখাটা ভালো কিন্তু এরপরে আবার একটানা রোজা রাখার পরামর্শ দেয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, শরীরের ওজন কমানোর
জন্য একটানা রোজা রাখা কোনো উপায় হতে পারে না। কারণ একটা সময় আপনার শরীর চর্বি গলিয়ে
তা শক্তিতে পরিণত করার কাজ বন্ধ করে দেবে। তখন এটি শক্তির জন্য নির্ভর করবে মাংসপেশির
উপর। যেটা স্বাস্থের জন্য ভালো নয়। আপনার শরীর তখন ক্ষুধায় ভুগবে।