পৃথিবী ঘুরেছে ২৪ ঘন্টার কম সময়ে, এটা কি পৃথিবী ধ্বংসের আলামত!!!

২৪ ঘন্টাতে যে একদিন হয় সেটা সবার জানা আছে। পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘুরতে যে সময় লাগে সেটা থেকে এই ২৪ ঘন্টা এসেছে। কিন্তু অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে, গত ৫০ বছরের তুলনায় পৃথিবী এই সময়ের চেয়ে দ্রুত গতিতে ঘুরছে।

কেন দুশ্চিন্তায় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা?

২০২২ সালের ২৯ জুলাই ২৪ ঘন্টারও কম সময় পৃথিবী নিজের কক্ষপথে ঘুরে এসেছে। এতে দিন-রাত দুটোই ছোট হয়ে আসছে। এছাড়া পৃথিবী নিজের কক্ষপথ ঘূর্ণনের আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এতে সব থেকে ছোট দিনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে দাড়িয়েছে। এর আগে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই সবচেয়ে ছোট দিনের রেকর্ড দেখেছিল বিশ্ব। ১৯৬০ সাল থেকে রেকর্ড করা তথ্য অনুযায়ী, সেদিন ১.৪৭ মিলিসেকেন্ড কম সময়ে পৃথিবী নিজের কক্ষপথে একবার প্রদক্ষিণ করেছে। কিন্তু এবার এর চেয়েও .১২ মিলিসেকেন্ড কম সময় নিয়েছে পৃথিবী। আর সেই কারণে সবচেয়ে ছোট দিনের রেকর্ড গড়ে ফেলেছে পৃথিবী।

পৃথিবী ঘুরেছে ২৪ ঘন্টার কম সময়ে, এটা কি পৃথিবী ধ্বংসের আলামত!!!

পৃথিবী ঘূর্ণনের এ অস্বাভাবিক গতির কারণ কি?

পৃথিবী ঘূর্ণনের এ অস্বাভাবিক গতির কারণ এখনো অজানা হলেও বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, এটি অভ্যন্তরীন বা বাইরের স্তর-মহাসাগর জোয়ার ভাটা বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হতে পারে। তবে গবেষকরা আরও বিশ্বাস করেন যে, এটি পৃথিবীর ভৌগলিক মেরুগুলির উপরিভাগে জুড়ে যে জায়গা রয়েছে, সেখানকার কোনো কারণেও গতি দ্রুত হতে পারে আবার কখনো ধীর গতিতে হতে পারে। পৃথিবী যদি এইভাবে ক্রমবর্ধমানভাবে ঘুরতে থাকে তবে তা নেতি বাচক লিপ সেকেন্ড প্রবর্তনের দিকে এগিয়ে যাবে, যাকে ড্রপ সেকেন্ড বলে। এটি পারমাণবিক ঘড়ির সাথে সামন্জস্যপূর্ণ রাখতে প্রভাব ফেলবে। তাহলে আমাদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। টাইমারের সফটওয়্যারের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে।

পৃথিবীর এই দ্রুত বা ধীর গতিতে প্রদক্ষিণের জন্য বিশ্বে কি আরও প্রভাব পড়তে পারে?

পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি যদি কমে যায় বা আস্তে আস্তে ঘুরলে, ঘূর্ণন কোণ এবং ঘূর্ণন বেগের তারতম্যের সিস্টেম উলোটপালোট হয়ে যেতে পারে। যেমন- আহ্নিক গতি বা বার্ষিক গতি কমে যাওয়ায় দিন-রাতের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাবে, এবং বছরের ব্যপ্তি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ঋতুগুলো খুব বড় হবে এবং সে ক্ষেত্রে ঋতুচক্র তার বৈচিত্রময়তা হারিয়ে ফেলতে পারে।

উত্তর গোলার্ধে সূর্য এর বেশি উপস্থিতিতে সেখানে, অধিক তাপের ফলে মেরুর বরফগুলো দ্রুত গলে যেতে পারে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে। একই কথা প্রযোজ্য দক্ষিণ মেরুর ক্ষেত্রেও। মরু অঞ্চলের আরো তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায়, বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। মরু ঝড়, তুষার ঝড়, জলোচ্ছাস এসেব সংখ্যা বেড়ে যাবে। আবার দাবানলের কারণে বিভিন্ন অঞ্চল উজাড় হয়ে যাবে। বন জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যাবে।

ভূ-ত্বকের কাঠামো গঠনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে। টেকটোনিক প্লেট ওলোট পালোট হয়ে যাবে। ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে পৃথিবীর জীবন ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটবে। নদী-সমদ্রের পানির সমতা নষ্ট হয়ে যাবে। জোয়ার ভাটার পানির জলোচ্ছাস এতো অধিকহারে হবে যে, মানষজাতির টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

পৃথিবীর চাারপাশে থাকা স্যাটেলাইটগুলোর ওপরও প্রভাব পরবে। স্যাটেলাইট গুলোতো পৃথিবীর বর্তমান গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলছে যেন এগুলো ভূ-স্থির উপগ্রহ হতে পারে। তাই মাটিতে দেখে মনে হয়, সেগুলো যেন স্থির অবস্থায় আছে। কিন্তু যদি ঘূর্ণন কমে যায় তবে সেগুলো আর ভূস্থির থাকবেনা। এদের আপেক্ষিক গতি বেড়ে যাবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর পর পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে। তাই মোবাইল ও অন্যান্য নেটওয়ার্ক ডিভাইস কিছুক্ষণ পর পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

  • সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যপার যেটা ঘটতে পারে তা হলো বায়ু মন্ডলের ধ্বংস।
  • অধিক মরুকরণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে
  •  অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাবে
  • কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যাবে
  • বায়ু মন্ডলের অন্যান্য গ্যাসীয় পদার্থের ভারসাম্য হারিয়ে যাবে
  • মানবজাতির অস্তিত্ব বিলীনের হুমকি হয়ে দাড়াবে

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url