কিডনিতে পাথর: কারণ ও চিকিৎসা

কিডনিতে পাথর: কারণ ও চিকিৎসা

কিডনিতে পাথর: কারণ ও চিকিৎসা:

কিডনিতে পাথরের কারণগুলো কি কি?

ক্যালসিয়াম অক্সালেট ফসফেট, ইউরিক অ্যাসিড এই উপাদানগুলো সংমিশ্রণ হয়ে কিডনি বা বৃক্কতে পাথর তৈরি হয়। যারা ড্রিহাইড্রেশনে ভোগে, দৈনিক ৮ থেকে ১০ গ্লাস এর কম পানি পান করে এবং শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম নিঃসরণ হয় তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। হাই-প্রোটিন ডায়েট যেগুলো রয়েছে অর্থাৎ লাল মাংস এগুলো যারা বেশি খায়, এছাড়াও পটেটো চিপস, ফেন্স-ফ্রাই এগুলোতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো আমাদের সোডিয়াম বাড়িয়ে দেয় এবং কিডনিতে পাথর এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অক্সালেট রিচ ফুড অর্থাৎ যেসব খাবারের মধ্যে অক্সালেট এর পরিমাণ বেশি থাকে, যেমন- নাট, সোয়াবিন, যেকোনো বীজ জাতীয় খাবার, এইসব খাবার বেশি খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ড্রাগ, চকলেট, ব্লাক টি- এগুলো বেশি যারা খায় তাদের কিডনিতে পাথর হওয়া ঝুঁকি থাকে। আরো কিছু রোগ রয়েছে যেগুলোর জন্য কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যেমন- গ্যাস্ট্রিক, বাইপাস অর্থাৎ পাকস্থলীতে যদি বাইপাস সার্জারি করা হয়ে থাকে তাহলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি থাকে।অ

কিডনিতে পাথর কিভাবে তৈরি হয়?

মানুষের যে পাঁচটি অত্যাবশ্যক অঙ্গ আছে তার মধ্যে হচ্ছে একটি কিডনি, কিডনির কাজ হচ্ছে রক্তকে পরিশোধিত করা এবং ইউরিন তৈরি করে। ইউরিন তৈরি করার ফলে শরীরের মেটাবলিজমের অর্থাৎ বিপাকের ফলে যে বজ্র পদার্থ তৈরি করে সেই বজ্র পদার্থ গুলো শরীরের বাইরে বের হয়ে যায়। বজ্র পদার্থ গুলোর মধ্যে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন অন্যতম। বজ্র পদার্থ বের করা ছাড়াও কিডনি শরীরের ফ্লুইড ইলেক্ট্রোলাইট এর সমতা রক্ষা করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কিডনির অন্যতম একটি কাজ। যখন প্রসাব তৈরি হয়, প্রসাবের ভিতরে ইউরিন এর মধ্য কিছু সলিড থাকে। সলিডগুলো যদি পরিমাণে বেশি হলে তখন  ক্রিস্টাল ধারণ করে। ক্রিস্টাল এর ফলে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়। এই পাথর কিডনিতে অবস্থান করতে পারে কিডনি থেকে পাথরটি বেরিয়ে এসে ইউরেটারে এসে আটকে যায় এবং বাধা সৃষ্টি করে। কখনো কখনো এটি ইউরেটার থেকে ইউরেনারী ব্লাডারের মধ্যে চলে যায়, তখন এটাকে ব্লাডার স্টোন বলা হয়। যখন এটি প্রস্রাব নালী বা ইউরেথ্রা মধ্যে যায়, তখন এটির নাম হয় ইউরেথ্রা স্টোন। এটির সম্পূর্ণ নালী বা রাস্তায় চিকন জায়গা থাকলে সেখানে বাধা প্রাপ্ত হয় এবং ইউরিনের ট্রাক্ট কে বাধাগ্রস্ত হলে কিডনিটি ফুলে যায় অর্থাৎ হাইড্রোনফ্রোসিস(উভয় কিডনি ফুলে যাওয়া) ডেভেলপ করে।

কিডনিতে পাথর হলে কোন লক্ষণগুলো দেখে বুঝবেন?

যদি শরীরের কিডনিতে পাথর হয় এর লক্ষণ সমূহ-
১. কোমরে একটু ব্যথা করে।
২. ইউরিনে মাঝে মাঝে লাল রংয়ের প্রসাব অর্থাৎ হেমাচুরিয়া হতে পারে। (হেমাচুরিয়া হল প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। এর কারণ হিসেবে কিডনী অথবা ইউরিনারী ট্রাক্টের কোন অংশে রক্ত কোষ প্রস্রাবে লীক করা। এর ফলে অনেক সমস্যা হতে পারে।)
৩. মাঝে মাঝে জ্বর হতে পারে।

কিডনিতে পাথর হলে কিভাবে নির্ণয় করবেন?

কিডনির পাথর সামান্য কিছু পরীক্ষা করে নির্ণয় করা সম্ভব যেমন- আলট্রাসনোগ্রাফি, এক্স-রে করে। সাধারণত ৯০% স্টোন আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং এক্স-রে করে ধরা পড়ে। কিছু Radiolucent স্টোন এক্স-রেতে ধরে না বা সফট স্টোন থাকে যেগুলো রশ্মি পাস করে কিছু যেগুলোতে ধরা পড়া একটু কঠিন।
পাথর থাকলে, পাথরের অবস্থা নির্ণয় করা এবং কিডনির ফাংশন সুনির্দিষ্ট করার জন্য বাড়তি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়, যেমন- IVU(intravenous urogram) অথবা সিটি ইউরোগ্রাম করা হয়।

কিভাবে কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসা দেয়া হয়?

কিডনিতে পাথরের অবস্থান শতভাগে নিশ্চিত হওয়ার পর ডিজাইন করা হয় কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে রোগী বেশি উপকারী হবে বা কিডনিকে কত দ্রুততায় সাথে বাঁধা মুক্ত করা যাবে অথবা পাথর মুক্ত করা যাবে। 

বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো Retrograde intrarenal surgery (RIRS) এখানে লেজার ব্যবহার করা হয়। এটি প্রসাবের রাস্তা দিয়ে মূত্র থলির মধ্য হয়ে ইউরেটার, কিডনির ভিতরে পর্যন্ত পৌঁছানো যায় এবং পাথর নির্ণয় করা যায়। পাথর নির্ণীত হওয়ার পরে লেজারের সরু ফাইবার প্রবেশ করিয়ে পাথরটাকে ধ্বংস করা যায় এবং ডাস্টিং মোডে এটিকে ধুলায় পরিণত করা যায়। এই পাথরগুলো ধুলায় পরিণত হয়ে draining ফ্লুইডের সাথে বেরিয়ে আসে এবং এটা শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় যে কিডনি থেকে পাথরটা অপসারিত হয়েছে।

এটির আরেকটি চিকিৎসা পদ্ধতি আছে যেটি হচ্ছে Percutaneous Nephrolithotomy (PCNL), যা শরীরের পাশে লয়িন(loins) অংশে অর্থাৎ এখানে কিডনি বরাবর চিকন একটি ছিদ্র করে একটি নালিকা করা হয়। এই নালিকাটি তৈরি করে সেখানে ওই ছিদ্র দিয়ে যন্ত্র প্রবেশ করে পাথরটিকে টুকরো করে বাহির করা হয়। এটিতে একটি নেফ্রোস্কোপ ব্যবহার করা হয়, যেটিতে কিডনির সমস্ত কুঠুরিতে যে চেকআপ করা যায় এবং সি আর্ম গাইডের (C-arm guidance) পাথরকে ১০০% নির্মূল করা সম্ভব এবং কিডনিতে পাথর মুক্ত করা যায়। এই দুইটি পদ্ধতিতেই কিডনির পাথর অপসারণ করার জন্য রোগীকে হাসপাতালের জন্য অল্প সময় থাকতে হয়। সাধারণত এক থেকে দেড় ঘন্টার বেশি ঘন্টার লাগে না সাধারণত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url