স্ট্রোক সম্পর্কে জানুন এবং এটিতে করনীয়:
স্ট্রোক কি?
অনেকের ধারণা থাকে যে স্ট্রোক হচ্ছে একটি হার্টের রোগ। আসলে স্ট্রোক হার্টের রোগ নয় মূলত এটি একটি মস্তিষ্কের রোগ। সাধারণত মস্তিষ্কে এর রক্তনালীতে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে, কোন কারণে রক্তনালি যদি ছিড়ে যায় তাহলে রক্তক্ষরণ হয়ে স্ট্রোক তৈরি করে। সে হিসেবে আমরা দুই ভাগে বিভক্ত করতে পারি।
ইসকেমিক স্ট্রোক- যা হচ্ছে মস্তিষ্কের রক্তনালির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে একটি স্ট্রোক।
হেমোরেজিক স্ট্রোক- মস্তিষ্কে রক্তনালী ছিড়ে যায় যে রক্তক্ষরণ হলো রক্তক্ষরণকারী জনিত কারণে যে স্ট্রোক হয় তাকে বলা হেমরোজিক স্ট্রোক।
এখানে মনে রাখতে হবে যে হেমারোজিক স্ট্রোকের তুলনায় মস্তিষ্কের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যেয়ে যে ইসকেমিক স্টোক করায় তার পরিমাণ অনেক বেশি। ৮০% কন্ডিশনে হয় ইসকেমিক স্ট্রোক আর ২০% হয় হেমোরেজিক স্ট্রোক।
স্ট্রোক কেন হয়?
স্ট্রোকের ঝুঁকিকে যদি আমরা ভাগ করি তাহলে দুই ধরনের ঝুঁকি রয়েছে, এক ধরনের কি আমরা বলি মডিফাইভাল ঝুঁকি (যে ঝুঁকি গুলোকে আমরা পরিবর্তন করতে পারি), আরেকটি হচ্ছে নন-মডিফাইভাল ঝুঁকি (অপরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি)।
শুরুতেই আমরা যদি নন-মডিফাইভাল ঝুঁকি অর্থাৎ যেগুলোকে পরিবর্তন করা যায় না, যেমন-
১. সাধারণত যাদের বংশে স্ট্রোকের ইতিহাস থাকে তাদের
২. স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে
৩. পুরুষের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে
৪. সাধারণত কম বয়স মানুষের তুলনায় বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এ স্ট্রোক বেশি হয়ে থাকে।
কিন্তু পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি গুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. ডায়াবেটিস, যাদের ডায়াবেটিস বেশি থাকে তাদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২. যাদের ব্লাড প্রেসার বেশি থাকে তাদের সম্ভাবনা বেশি ।
৩. যাদের রক্তের কোলেস্টেরল পরিমাণ বেশি থাকে তাদেরও স্ট্রোক সম্ভাবনা বেশি ।
৪. এছাড়াও যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, তারাও স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ।
৫. যাদের ধূমপান করার অভ্যাস রয়েছে অথবা তামাক, জর্দা পাতা, গুল ব্যবহারকারী অথবা যারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করে তাদের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আগে আমরা স্ট্রোককে দুই ভাগে ভাগ করতাম। ধারণা করা হতো ৪০ বছর পর্যন্ত যারা আছে তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকিটা কম। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে আছে তাদেরও স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। এমনকি বাচ্চা বয়সেও স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা থাকে। মূলত এগুলো কিছু বংশগত কারণে ও নালীতে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করার যে ফ্যাক্টর গুলো রয়েছে এই ফ্যাক্টর গুলির কারণে হয়ে থাকে।
আসলে, আমাদের সমাজে নানা অবক্ষয়ের ফলে যুব সমাজ মাদকের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকিটা অনেক বেড়ে যায়।
একটা মানুষের স্ট্রোকে প্রথম কি কি উপসর্গ হয়?
আসলে স্ট্রোক একটি পরিবর্তনযোগ্য রোগ। স্ট্রোক হলে সাথে সাথেই এর উপসর্গগুলি দেখা দেয়। এর মধ্যে কিছু উপসর্গের কথা আমাদের মনে রাখা দরকার,যেমন-
১. হঠাৎ করে যদি কোন রোগীর কথা বলতে সমস্যা হয়
২. কোন রোগীর মুখ মন্ডল বাঁকা হয়ে যায়
৩. শরীরের কোন অংশের কাজ হঠাৎ করে দূর্বল হয়ে যায় তাহলে ধরে নিতে হবে তার স্ট্রোক হয়েছে।
৪. এছাড়াও হঠাৎ করে চোখে দেখতে অসুবিধা হয়। দুই চোখে এমন হতে পারে অথবা এক চোখেও হতে পারে
৫. তার ব্যালেন্স করতে সমস্যা হতে পারে
৬. তার জ্ঞানের মাত্রার (সেন্সলেস) মধ্য তারতম্য দেখা দিচ্ছে এই ধরনের যদি অবস্থা দেখা দিলে তাহলে সাথে সাথেই কোন রোগীকে সাথে সাথেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে স্ট্রোকের যে পরবর্তী যে অক্ষমতা তৈরি হয় সেগুলো থেকে তাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
স্ট্রোকে কি কি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
আমরা একসময় জানতাম যে, স্ট্রোকের কোন চিকিৎসা নেই কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যে, যদি রোগী তিন ঘন্টা থেকে শুরু করে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্য পৌঁছাতে পারে তার যেই কারণে হয়েছে, সেই কারণে সমাধান করতে পারলে সে হয়তো পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।
সেই ক্ষেত্রে রোগী নিজে যদি টের পায় তার কোন মুখমন্ডল বাঁকা হয়ে গেছে অথবা শরীরের কোন একদিক দুর্বল হয়ে আসতেছে অথবা চোখে দেখতে তার অসুবিধা হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে এমন এক ডায়াগনিন্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে যেখানে সিটি স্ক্যান করা সম্ভব। ব্রেনের সিটি স্ক্যান করে সাথে সাথে রোগটিকে ডায়গনিস্ট করে এটি হেমারোজিক স্ট্রোক হয়েছে না ইসকেমিক স্ট্রোক হয়েছে তা নির্ণয় করা সম্ভব। যদি ইসকেমিক স্ট্রোক হয় তাহলে তাৎক্ষণিক ভাবে বিভিন্ন উপসেন্টার গুলোতে এখন এটা বাংলাদেশে করা সম্ভব সেই সেন্টারগুলিতে এই স্ট্রোকটি যে কারণে হয়েছে তা গলানো (Thrombolysis) সম্ভব হয়।
স্ট্রোক প্রতিরোধ করবেন কিভাবে?
কিছু নিয়ম যদি মেনে চলা যায় তাহলে সে স্ট্রোকের ঝুঁকে থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন-
১. কারো যদি ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
২. কারো যদি ব্লাড প্রেসার অবশ্যই তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
সরাসরি কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে সেক্ষেত্রে তার লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে
৩. কোলেস্টেরলের যুক্ত খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে
৪. কোলেস্টেরল যেন কম থাকে সেই ধরনের ঔষধ সেবন করতে হবে
৫. প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট মাত্রার এক্সারসাইজ করতে হবে যাতে ওজন বেড়ে না যায় এবং শরীরের যে ফ্যাট বা চর্বি আছে, সেই ফ্যাটটাকে যেন বার্ন করতে পারে।
৬. অবশ্যই ধূমপান মুক্ত থাকতে হবে কোন ধরনের ড্রাগ এবং অ্যালকোহল নেওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।