মানুষ আসলে কাঁদে কেন? কান্নার কি কোনো উপকারিতা আছে-নাকি শুধুই মন খারাপ হয়?
কান্না তো মানুষের জীবনে জন্মের পর থেকেই এসেছে। কিন্তু আমরা কয়জন ভেবে দেখি যে কাঁদলে কেন চোখ দিয়ে পানি আসে? কান্নার কি কোন উপকারিতা আছে? নাকি শুধুই মন খারাপের কারণেই কান্না আসে। এই প্রশ্নের উত্তর চলুন জেনে নেয়া যাক।
কারা বেশি কাঁদে- নারী নাকি পুরুষ?
ইংল্যান্ডের মনোবিজ্ঞানী উলিয়াম স্রে বলেন, নারীরা গড়ে মাসে পাঁচবারের বেশি কাঁদে। সেখানে পুরুষরা গড়ে ২ বারও কাঁদেনা।
নারীরা গড়ে ৫ থেকে ৬ মিনিট ধরে কাঁদে। আর পুরুষরা কাঁদে মাত্র
২ বা ৩ মিনিট ধরে। নেদারল্যান্ডেস এর টিলবার্গ ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যাডে ভিঙ্গার
ওয়েভ তার একাধিক গবেষণায় দেখিয়েছেন, জন্মের পর ছেলে শিশু আর মেয়ে শিশুর কান্নায় কোনো
পার্থক্য থাকে না। সব ধরনের শিশু সমান পরিমাণে কাঁদে। কিন্তু ছেলে শিশুরা প্রাপ্ত বয়স্ক
হয়ে উঠলে তাদের কান্নার পরিমাণ কমে যায়।
গবেষকরা
বলছেন, এতে সামাজিকীকরণের একটি প্রভাব রয়েছে। যেসব দেশে কান্নাকে যত সহজভাবে গ্রহণ
করা হয়, সেসব দেশের মানুষ বেশি কাঁদে। অন্যদিকে, যেসব দেশে সহজভাবে নেয়া হয় না, সেখানে
কান্নার হারও কমে যায়।
পুরুষের
দেহে টেস্টোস্টেরণ নামক হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে বলে তারা কাঁদেও কম।
মানুষ কান্না করে কেন?
কান্না
হচ্ছে আবেগীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। আমেরিকান নিউরো-বিজ্ঞানী এবং কান্না বিশেষজ্ঞ ডা.
ফ্রে বলেন, মানুষ কোনো কষ্টের খবর শুনে বা তীব্র আবেগীয় কোনো ঘটনার সম্মুখীন হন, তখন
তা মানুষের মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমকে সক্রিয় করে। এই লিম্বিক সিস্টেমটি তখন অশ্রু
উৎপাদনকারী ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিকে সংকেত দেয়। এই সংকেত পাঠানোতে অশ্রু উৎপাদিত হয় এবং
তা সুক্ষ্ম নালী বেয়ে বের হয়ে আসে। অতিরিক্ত অশ্রু মানুষের চোখ এবং নাক বেয়ে বের হয়ে
আসে। তিনি আরও বলেন, মানুষের চোখে প্রতি মিনিটে তিন মাইক্রো লিটার অশ্রু উৎপাদিত হয়
আর ক্রমাগত কাঁদতে থাকলে এই পরিমান আরো বাড়ে।
অশ্রু কিভাবে উৎপন্ন হয়?
বিবিসি-এর
হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিয়িং এর প্রতিবেদন বলছে, সব ধরনের অশ্রু উৎপন্ন হয় মানুষের চোখে
থাকা ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড বা ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি থেকে। এই গ্রন্থি থাকে চোখের আইবল
বা অক্ষিগোলক এবং চোখের পাতার মাঝামাঝি স্থানে। এই গ্রন্থি ক্রমাগত অশ্রু উৎপন্ন করতে
থাকে। যার করণে আমরা পলক ফেরার সময় চোখের পাতা ওঠা-নামা করলেও চোখের কোনো ক্ষতি হয়
না।
কোন অশ্রু কিসের জন্য?
লন্ডন ভিত্তিক চিকিৎসক ডা. নিক নাইট, যিনি হিউম্যান পারফরম্যান্স নিয়ে গবেষনা করেছেন, তিনি বলেন- তিন ধরনের অশ্রু হয়ে থাকে।
রিফ্লেক্স টিয়ার- কোনো কাজের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যে
অশ্রু উৎপাদিত হয়। পেঁয়াজ কাটার সময় আমাদের চোখে যে পানি আসে সেটা রিফ্লেক্স টিয়ার।
বেসাল
টিয়ার- এই অশ্রু সব সময়ই থাকে। এর কাজ হচ্ছে চোখকে ভেজা রাখা।
সাইকিক টিয়ার বা আবেগীয় অশ্রু- কষ্ট কিংবা আনন্দ, এই দুই ধরনের আবেগেই এই অশ্রু উৎপাদিত হয়। বিবিসি-এর হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিয়িং এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মস্তিষ্কের লিম্বিক অংশ থেকে এই অশ্রু উৎপাদিত হয়। মস্তিষ্কের এই অংশ আবেগ, স্মৃতি ও উদ্দীপিত হওয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে।
কান্নার কি কোন উপকারিতা আছে?
কান্না
দেহের প্যারা-সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে। এটি হার্ট রেট কমিয়ে শরীরকে
শান্ত করে, বিশ্রাম নিতে সহায়তা করে এবং আরামবোধ হয়।
ব্রিটিশ
চিকিৎসক নিক নাইট তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, সাইকিক টিয়ার বা আবেগীয় অশ্রুতে লুসিন এনকোফালেন
নামে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে, একে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক বা Natural Pain
Killer ও বলা হয়। যার কারণে কান্নার পর মানুষ ভালো অনুভব করে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য
বিভাগ NHS এর তথ্য মতে, শিশুদের জন্য নিয়ন্ত্রিত কান্না স্বাস্থ্যকর। কারণ, এটি শিশুদের
ঘুমের সমস্যা দূর করে। তবে এর বিপক্ষেও যুক্তি রয়েছে। তাই যদি মনে হয় কান্না পাচ্ছে,
তাহলে সেটাকে আটকে না রেখে কেঁদে ফেলুন। কারণ কান্নার কিন্তু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।