প্লাস্টিক কী? এর ব্যবহার ও ক্ষতিকারক দিকগুলো কি?
প্লাস্টিক আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে পড়েছে। এটাই যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক প্লাস্টিকের আবিষ্কার, এর ব্যবহার, এর স্থায়িত্ব ও ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি? এবং কোন প্রাণী প্লাস্টিক নিঃশেষ করে দিতে পারে সে সম্পর্কেও জেনে নেব আমরা।
প্লাস্টিক কি?
প্লাস্টিক এমন বস্তু যা কোন সিন্থেটিক বা আধা সিন্থেটিক জৈব যৌগ দ্বারা তৈরি। নমনীয়তার জন্য এটিকে গলিয়ে শক্ত জিনিসের মধ্যে ঢালা যায়।
প্লাস্টিকের আবিষ্কার
মানুষের জীবন যাপনকে সহজ করার জন্য ১৮৫০ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার পার্কস প্রথম প্রাকৃতিক রাবার থেকে প্লাস্টিক তৈরি করেন। পরবর্তী সময়ে ১৮৬৯ সালে জন ওয়েসলে হায়াত কর্তৃক সেলুলয়েডের তৈরি সহজীকরণ পদ্ধতি এতে নতুন মাত্রা যোগ করে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতে থাকে প্লাস্টিক নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্লাস্টিক
বর্তমানে প্লাস্টিকের ব্যবহার ছাড়া জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক গবেষণায় জানা যায়,বাংলাদেশে প্রতিবছর মাথাপিছু প্রায় ৫ কেজি প্লাস্টিক দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হয়। পত্রিকার খবর মতে, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্যাদির বাজার প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের। আর প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। ২০ লক্ষেরও বেশি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত।
প্লাস্টিকের ব্যবহার
প্লাস্টিক প্রাকৃতিক এবং গতানুগতিক বিভিন্ন উপকরণের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে। পৃথিবীতে বছরে মোট প্লাস্টিক উৎপাদিত হয় ৩৫ কোটি টন। পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিস এর মতে, ২০১৫ সাল নাগাদ পৃথিবীতে ৬৩০ কোটি টন প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র আমেরিকাতে প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিকপন্য ব্যবহৃত হয়।
প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সমূহ
পৃথিবীতে কোন জিনিসই এককভাবে ভালো কিংবা খারাপ হতে পারে না। তাই প্লাস্টিক ও খারাপের ঊর্ধ্বে নয়। ঢাকা শহরে প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ পলিব্যাগ পরিত্যক্ত হয়ে তা পুকুর ডোবা নদী-নালা ও সাগরে গিয়ে জমা হচ্ছে,কৃষকের চাষের জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট ভরে আছে প্লাস্টিক বর্জ্যে। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, মোঃ জিয়াউল হক বলেন, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার ৬ শত টন বর্জ্য তৈরি হয়। এসব পদার্থ যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব থেকে অতি ক্ষুদ্র কণা প্রতিদিন মানুষের পেটে যাচ্ছে । এতে ক্যান্সার, কিডনির সমস্যা সহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের যথেষ্ট ব্যবহারে পরিবেশ বিষাক্ত ও দূষিত হচ্ছে।
ব্যবহৃত প্লাস্টিকের স্থায়িত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক এ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক এক গবেষণায় বলেছে, ১.দোকানে মুদি পণ্য বহনের জন্য যেসব প্যাক ব্যবহার করা হয় সেগুলো প্রকৃতিতে মিশে যেতে ২০ বছর সময় লাগে,
২. চা, কফি, জুস কিংবা কোমল পানির জন্য যেসব প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হয় সেগুলো ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে,
৩.ডায়াপার ও প্লাস্টিক বোতল টিকে থাকে ৪৫০ বছর পর্যন্ত ।
প্লাস্টিক রিসাইকেল পদ্ধতি
রিসাইকেল প্রণালী হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পুরাতন দ্রব্যটি কে পরিবর্তন করে নতুন বস্তু পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বেশি এগিয়ে আছে কার্বিওস নামে একটি ফরাসি কোম্পানি। তারা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে কম্পোস্টের মধ্যে পাওয়া একটি এনজাইম এর সংস্করণ করেছে-যা পিইটি ভাঙতে পারে । কারবিওসের ডেপুটি প্রধান নির্বাহী মার্কিন স্টেফান বলছেন,তাদের প্রযুক্তি দিয়ে যেকোনো পিইটি বর্জ্য এখন যেকোন রকম পিইটি পন্যে রিসাইকেল করা সম্ভব। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি পলিস্টার রিসাইকেল করার প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে -যা বছরে প্রায় সাত কোটি টন দ্রব্য রিসাইকেল করতে পারে। কিন্তু ব্যবহৃত পলিথিনের বর্জ্যের সাথে তুলনা করলে এই রিসাইকেল কৃত পণ্য কিছুই না।