লোহিত সাগর কি আসলে লাল?

একবার ভেবে দেখুন তো- বড় কোন লেক বা দিঘীর পাড়ে দাড়িয়ে পানির দিকে তাকিয়ে দেখলেই সেখানে কোনো পানি নেই। আদিগন্ত লাল রক্তের ছড়াছড়ি।

ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। রক্তের সমুদ্র বা লেক বলে কিছু না থাকলেও কিছু এলাকা আছে যেখানে পানির রঙ রক্তের মতোই লাল দেখায়। চলুন এর পিছনে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা জেনে নেই।

লোহিত সাগরের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?

লোহিত সাগর কি আসলে লাল?

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্রের (যেমন- সৌদি আরবের পশ্চিমে অবস্থিত লোহিত সাগরে) ‘ট্রাইকোডেসমিয়াম ইরিথ্রিয়াম’ নামক একধরনের সায়ানো-ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। এই সায়ানো-ব্যাক্টিরিয় পরিবেশ থেকে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। এরা সাধারণত দলবদ্ধ ‘কলোনি’ গঠন করে বসবাস করে এবং উষ্ণ পানি এদের জীবন ধারণে সহায়ক হওয়াতে লোহিত সাগরে এরা প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এদের দেহে থাকে ‘ফাইকোইরিথ্রিন’ নামক লাল রঙের রঞ্জক পদার্থ।

যখন মাইলের পর মাইল ট্রাইকোডেসমিয়া ইরিথ্রিয়ামের কলোনি সমুদ্র পৃষ্ঠে বিস্তার থাকে তখন তাকে বলে ‘ব্লম’। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তার লাল বর্ণের ব্লমের কারণে সমুদ্রের পানিকেও লাল দেখা যায়। সেখান থেকে এই সাগরের নাম দেয়া হয়েছে ‘লোহিত সাগর’।

এছাড়া গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমুদ্রে ’রোডোফাইটা’ গোত্রের কিছু সামুদ্রিক লোহিত শৈবাল জন্মায়। যেমন- পলিসাইফোনিয়া, হেলিমোনিয়া ফ্লোরেসি, লরেন্সিয়া ইত্যাদি। এরাও ফাইকোইরিথ্রিন, ফাইকোসায়ানিন বহন করে। ফলে এই রোডোফাইটা শৈবালের কারণেও সমুদ্রের পানি লাল দেখা যেতে পারে।

আরো কিছু সমুদ্রের পানি এই সমস্ত কারণে লাল দেখা যায়। যেমন- বাল্টিক সাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর, ভারত মহাসাগর, উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর এবং অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে ট্রাইকোডেসমিয়াম ইরিথ্রিয়াম ব্লমের কারণে পানি লাল দেখা যায়। তবে সব সময় কিন্তু এই সব জায়গায় সব সময় কিন্তু পানি লাল দেখা যায় না। যখন সায়ানো-ব্যাকটেরিয়া ব্লম তৈরি করে তখনই মাত্র লাল রঙ দেখা যায়। একবার ব্লম তৈরি হলে সেটা সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস বিরাজ করতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url