বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু ক্ষতিকর খাবার, যা আপনার মৃত্যুর কারন হতে পারে!!!
বাংলাদেশের মানুষ চাল মাছ, মাংস, শাক-সবজি মিলিয়ে অনেক ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। তবে এসব খাবার এর মধ্য কিছু খাবার রয়েছে, যা অনেক সময় মানুষের ক্ষতির কারন হয়ে উঠতে পারে। আপাত দৃষ্টিতে এসব খাবারের অনেকগুলো নিরাপদ মনে হলেও বিশেষ কারণে, বা বিশেষ অবস্থায় এগুলো বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে মানব দেহের জন্য। ক্ষতিকর আবার কোন কোন খাবার রয়েছে যে গুলো তাৎক্ষনিক ভাবে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে, কোন কোন খাবারে হওয়া ক্ষতি তাৎক্ষনিক ভাবে না বুঝা গেলেও তা ধীরে ধীরে দেখা দিতে থাকে।
যে সব খাবার খেলে আমাদের শরীর এর ক্ষতি হতে পারে তা জেনে নাওয়া যাক:
পটকা মাছ
বাংলাদেশ, চীন, জাপান কোরিয়া সহ বেশ কিছু দেশের মানুষের কাছে পটকা মাছ বা পাফার ফিশ বেশ জনপ্রিয় একটি মাছ । কিন্তু এই মাছটি ঠিক ভাবে প্রসেস করা না হলে, এর শরীরে থাকে নিউরোটক্সিন নামক বিষাক্ত পদার্থ কয়েক ঘণ্টার মধ্য একটি মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। নিউরোটক্সিন নামক বিষাক্ত পদার্থ যা সায়ানাইড এর তুলনায় বেশি কার্যকারী হতে পার। মাছটি হয়তো ক্ষতিকর নয়, কিন্তু বিষাক্ত অংশটুকু কোনোভাবে মাছের শরীরে রয়ে গেলে, আর তা মানুষের পাকস্থলিতে গেলে অল্পক্ষণের মধ্য এটা মানুষ কে পক্ষঘাতগ্রস্ত করতে পারে, এমন কি মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাই এই মাছটার খাওয়ার আগে দক্ষতার সাথে মাছের শরীরের বিষাক্ত অংশটুকু আলাদা করে ফেলতে হবে।
মাশরুম
অনেক দেশেই মাশরুম একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ খাবার।
মাশরুমের উপকারিতা:
- রক্ত চাপ কমাতে পারে, টিউমার কোষের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
- বহুমূত্র রোগীদের জন্য উপকারি।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের দূর করতে পারে।
- হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও বাত ব্যাথার মতো রোগের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
তবে প্রকৃতিতে মাশরুমের হাজার রকমের জাত আছে ।এবং এগুলোর অনেক গুলো মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর কারন হতে পারে। মাশরুমের নানা জাতের মধ্য বাংলাদেশে ৮ থেকে ১০ টি জাতের চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে পাওয়া যায় মাশরুমের এমন অনেক জাত রয়েছে, বিশেষ করে বুনো মাশরুমের, অনেক সময় শরীরের জন্য বিষাক্ত ও ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যাঙের ছাতা বলে পরিচিত বুনো মাশরুমের এক ধরনের ছত্রাক থাকে, যা লিভার ও কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
খেসারি ডাল
বাংলাদেশে মসূর ও মুগ ডালের পাশাপাশি অনেকের খাদ্য তালিকায় খেসারি ডালও থাকে, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই ডালে বোয়া(BOAA)নামের এক প্রকার অ্যালানাইল অ্যামিনো এসিড থাকতে পারে। যা বিষাক্ত নিউরোটক্সিন তৈরি করে। এই অ্যাসিড নিউরো ল্যথারিজম, বা স্নায়ুবিক পঙ্গুত্ব করতে পারে। এই রোগের লক্ষন অনেক সময় হঠাৎ করেই দেখা দেয়। এতে করে হাঁটতে গিয়ে অসুবিধা এবং অসহ্য যন্ত্রণা হওয়া কিংবা পা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। বেশি দিন ধরে খেসারির ডাল খেলে এই রোগ হতে পারে।
আলু
আলু আমাদের দৈনন্দিন প্রায় খাবারেই উপস্থিত থাকেই। আলুতে শেকড়ের জম্ম হলে সেখানে গ্লাইকোঅ্যালকায়েড নামের এক ধরনের উপাদান তৈরি হয়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন যাবত আলু পড়ে থাকলে এই ধরনের উপাদানের জন্ম হয় । অনেক সময় গাছের পাতায় বা কাণ্ডেও এই উপাদান থাকে। আলুর গায়ে শেকড় জন্মালে যে লাল রঙের তৈরি হয়, সেখানে এই উপাদান বেশি থাকে, এই গ্লাইকোঅ্যালকায়েড শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পার। এছাড়াও ডায়রিয়া মাথাব্যথা, এমনকি মানুষ কমায় জেতে পারেন। বলা হয়ে থাকে, কেউ কোন ভাবে ৩ থেকে ৬ মিলিগ্রাম পরিমান এই উপাদান খেয়ে ফেললে মৃত্যু হতে পারে। এছাড়াও আলু অনেক সময় সবুজ রঙের এক ধরনের পদার্থ দেখা যায়। সেটা হল কারসিনোজেন নামের একটা উপাদান, যা ক্যান্সার এর কারন হতে পারে।
টমেটো
টমেটো গাছের পাতা ও কাণ্ডে অ্যালকালাইড থাকে যা পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কাঁচা টমেটোর ভিতরে এই উপাদান বেশি বলে মনে করা হয়। এ কারণে ভাল করে রান্না না করে বেশি কাঁচা টমেটো খাওয়া উচিত নয় বলে মত দেন পুষ্টিবিদেরা, কারন বেশি পরিমানে কাঁচা টমেটো খেলে যে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পরতে পারেন। টমেটো গাছের পাতাও কোন ভাবে খাওয়া উচিত নয়।
কাজু বাদাম
কাজু বাদাম এর দুইটি জাত রয়েছে একটি মিষ্টি, অপরটি তিতকুটে। এটি একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও, এতে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড নামের একটি বিষাক্ত উপাদান থাকে। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে, কারন তা শরীরে হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করতে পারে। কাঁচা অবস্থায় তেতো কাজুবাদাম খাওয়া একে বারে উচিত নয়।
আপেল
আসলে ঠিক আপেল নয়। আপেলের বীচির ভিতরে খানিকটা পরিমান সায়ানাইড থাকে। ফলে শরীরে ভেতর যদি বেশি পরিমানের আপেলের বিচির নির্যাস প্রবেশ করে তাহলে তা তাকে ফেরে ফেলার মত সায়ানাইড তৈরি করতে পারে। আর সায়ানাইড হল একটি মারাত্মক ধরনের বিষ।বিচি সহ আপেলের জুস তৈরি করা বিষ তৈরি হতে পারে। তবে বিচি বাদ দিলে আপেলের বাকি অংশে পুষ্টি রয়েছে।
কাঁচা মধু
পাস্তুরিত করা হয়নি এমন কাঁচা মধু শরীরের জন্য ক্ষতিকর কারন হতে পারে, কারন কাঁচা মধুর মধ্য অনেক বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে। যার কারনে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এছাড়া এমন মধু খাওয়ার ফলে ঘোর ভাব আসা, দুর্বল লাগা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বমি করার মত সমস্যা হতে পারে। তাই কাঁচা মধু না খেয়ে প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বিশেষ করে এইটা দেখে নিতে হবে, সেই মধুর ভিতরে যেন মৌমাছির চাকের বা মৌমাছির কোন অংশ যেন না থাকে।
মটরশুঁটি ও শিমের বিচি
বাংলাদেশে মটরশুঁটি ও শিমের বিচি এক ধরনের জনপ্রিয় খাবার। মটরশুঁটি ও শিমের মধ্য ফাইটোহেমাগুলিটিন নামক একটা পদার্থ থাকে যা অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ কারনে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, রান্নার আগে মটরশুঁটি ও শিমের বিচি অবশ্যই ১৫ মিনিট ধরে পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি ফেলে দিয়ে আবার রান্না করতে হবে।
কচু
কচু বাংলাদেশে একটি সবজি এবং এর পাতা শাঁক হিসেবে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার হয়, কচু গাছ যদি ছায়ায় জন্মে বা বড় হয় তাহলে এর মধ্য একটি কম্পনেন্ট তৈরি হয় যা অনেকের জন্য এলার্জি তৈরি করে। ফলে কচু খেলে তাদের চুলকানি হয় গলা ফুলে যায়। এর কারন হল কচুতে রয়েছে প্রুচুর পরিমানে অক্সালেট থাকে। অনেক সময় এতে করে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে। সুতরাং কচু জাতীয় জিনিস খেতে হলে লেবু খেতে হবে, সেটা লেবুর অক্সালেটের সাথে কাজ করে, অক্সালেট প্রশমিত করে।