ঘোড়া কিভাবে সাপের কামড় থেকে মানুষকে বাঁচায়?

প্রতিবছর বাংলাদেশে অনেক মানুষ সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের এক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর দেশব্যাপী  সাপের কামড়ে মারা যায় ৬হাজার ৪১ জন এবং বিশ্বব্যাপী এর সংখ্যা প্রায় এক লক্ষেরও বেশি। সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা আফ্রিকার পরেই ভারতীয় উপমহাদেশেই সবচেয়ে বেশি।

এসকল অঞ্চলে এত মৃত্যু হবার কারণ, ৮৬ শতাংশ মানুষ সাপে কামড়ালে যায় ওঝার কাছে। আর চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র ৩ শতাংশ। অথচ, সাপে কামড়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকারী চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। এটি সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারে।

অনেকেই জানেন, অ্যান্টিভেনম তৈরি করতে ঘোড়ার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন এখন কেমন করেই তা সম্ভব। চলুন জেনে আসা যাক কিভাবে এবং কেন ঘোড়ার মাধ্যমে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়।

কেন ঘোড়ার মাধ্যমে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়?

পৃথিবীতে খুব অল্প সংখ্যক প্রাণী সাপের বিষ প্রতিরোধের ওষুধ তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে গাধা, ঘোড়া, বেজি, ভেড়া, ছাগল, খরগোশ, মুরগী, উট, ঘোড়া এবং হাঙর। তবে এসব প্রাণীদের মধ্যে বিশেষ কিছু কারণে ঘোড়া সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

কিভাবে ঘোড়ার মাধ্যমে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়?

ঘোড়া কিভাবে সাপের কামড় থেকে মানুষকে বাঁচায়?

ঘোড়া থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি করতে কতগুলো সুনির্দিষ্ট ধাপ রয়েছে। 

১. অ্যান্টিভেনম উৎপাদনে প্রথম পর্যায়ে একটি পাত্রে কোনো কাগজ বা প্লাস্টিক আটকিয়ে সেখানে সাপের দাঁত ঢুকিয়ে সাপের বিষ সংগ্রহ করা হয়। একই সাপ হতে এভাবে সপ্তাহে একবার পূর্ণ পরিমাণে বিষ পাওয়া যায়।

২. সংগৃহীত সাপের বিষ -২০𑄨 সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হয়। যেখানে বিষ থেকে জলীয় অংশ আলাদা করা যায়।

৩. এরপর ব্যবহৃত হয় ডোনার প্রাণী। এখানেই ঘোড়ার ব্যবহার শুরু Doner Animal হিসেবে। পূর্বে সংগ্রহ করা বিষ খামারে ঘোড়ার ধমনীতে নির্দিষ্ট মাত্রায় ইনজেকশন ব্যবহার করে প্রবেশ করা হয়। এতে ঘোড়া মরে না। প্রায় ৩/৪ দিন ঘোড়া অসুস্থ থাকে।

৪. তারপর ঘোড়াটা সুস্থ হয়ে যায়। তার মানে ঘোড়ার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে এসেছে। এ পর্যায়ে ঘোড়ার শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। গড়ে একটি ঘোড়া থেকে ৬ লিটার করে সংগ্রহ করা যায়।

৫. আলাদা করা রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা করা হয়। এই আলাদা করা প্লাজমা হতে বিভিন্ন রাসায়নিক উপায়ে অ্যান্টিভেনম বিশুদ্ধ করা হয়।

৬. সর্বশেষ পর্যায়ে শিশিতে ভরিয়ে অ্যান্টিভেনম বাজারে সরবারহ করা হয়।

আশার আলো

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি করলে সব থেকে বেশি কার্যকর হয়। কারণ, এক এক দেশের সাপের প্রকৃতি এক এক রকম। এখন পর্যন্ত এদেশে বেশির ভাগ অ্যান্টিভেনম আসে ভারত থেকে। যেগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অকার্যকর। তবে ২০১৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে অ্যান্টিভেনম নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। তাই আশা করা যায়, খুব শিঘ্রই বাংলাদেশেও অ্যান্টিভেনম উৎপাদন করা যাবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url