মানুষ কেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে এ থেকে কাটিয়ে ওঠার উপায় কি
নিচে দুটি টি-শার্টের ছবি দেখতে পাচ্ছেন এই দুটি টি-শার্টের মধ্যে থেকে যদি একটি নিতে বলা হয় আপনি কোনটি বেছে নিবেন লালটা নাকি হলুদটা? একটু কঠিন তাই না? এটা হচ্ছে সিদ্ধান্তহীনতা ।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন দুই বা তার চেয়ে বেশি অপশন বা বেশি বিকল্প থেকে যখন কোন একটিকে বেছে নিতে বলা হয় ঠিক তখনই মানুষের যে সমস্যাটি তৈরি হয় সেটি হলো সিদ্ধান্তহীনতা বা Confusion এই সিদ্ধান্তহীনতা কম বেশি সব ধরনের মানুষের মধ্যেই দেখা যায়, কারো কারো ক্ষেত্রে এটি এক বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাড়ায়।
মানুষ কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না?
সিদ্ধান্ত নিতে না পারা বা দুটি বা কয়েকটি বিকল্পের মধ্যে একটি বেছে নিতে না পারার কারণ অনেক রকম হতে পারে। তার মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে ।
আত্মবিশ্বাসের অভাব যার কারণে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায় ।
আর একটি কারণ হচ্ছে দুটি বিকল্পের মধ্যে কোনটি তার জন্য ভালো মানের সেটি নিশ্চিত হতে পারে না। যার কারণে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
সহজে কোন কিছু গ্রহন না করা ।
ইতিবাচক এবং নৈতিক ভাবে মনের গভির থেকে চিন্তা করতে না পারা ।
সিদ্ধান্ত নিতে কী কী সমস্যা হয়?
সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে নতুন কোন ধরনের পদক্ষেপ তারা নিতে পারে না। কোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অনেকে চিন্তা করে এবং মানুষকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। এক বারে কোন একটি সিদ্ধান্ত তারা কখনোই নিতে পারে না। কোন একটি সিদ্ধান্ত নিলে কয়েকদিন পর আবার সেটি পরিবর্তন করে আরেকটি সিদ্ধান্ত নেয়, কারণ তার মনে করে হয়তো আগের সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। এরা যেহেতু তীব্র মানসিক চাপে ভোগে তাই দেখা যায় তাদের মধ্যে Depression চলে আসে এবং সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে চরম অস্থিরতা কাজ করে এবং এর থেকে তাদের মধ্যে Anger problem বা হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়।
সিদ্ধান্ত নিতে নিতে না পারায় তার আত্মবিশ্বাসে আবার প্রভাব ফেলে। আর যদি দেখা যায় যে, সে একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাহলে সেটি তার আত্মবিশ্বাসকে একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে নিয়ে যায়। অর্থাৎ পুরো বিষয়টা একটা চক্রের মতো কাজ করতে থাকে, ফলে কোন একটি কাজ করতে যতটা মনোযোগ দেয়া দরকার, পরিশ্রম করা দরকার কিংবা প্রচেষ্টা নেয়া দরকার তার কোনটাই না করে ওই ব্যক্তির Focus থাকে যে - সে পারবে কি-না তার উপর। ফলে ওই কাজটা আসলে আর করতেই পারে না এর ফলে যেটি হয় সেটি হচ্ছে তার মধ্যে Anxiety বা ভয় কাজ করে এবং এগুলো শরীরকেও প্রভাবিত করে। দেখা যায় যে, তার হাত-পা কাঁপছে, অস্থির লাগছে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, শরীর কাঁপছে ঘাম হচ্ছে, গলা শুকিয়ে আসছে এধরনের নানা-রকম উপসর্গ যার কারণে তার আচরণেও সমস্যা দেখা দেয়।
কীভাবে সারিয়ে তোলা যায়
এখন আসি এই যে এধরনের সমস্যায় ভুগলে বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে কীভাবে সেগুলো সারিয়ে তোলা যায়? প্রথমেই যেটি করতে হবে, সবকিছু সহজভাবে মেনে নিতে হবে, যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা অনেক সময় ভুল প্রমাণিত হতেই পারে তাই বলে ভুল কেন হলো সেটা ভেবে আত্মবিশ্বাস হারালে চলবেনা। যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে যে সিদ্ধান্তটি ভুল হতেই পারে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা, এটা মেনে নিতে হবে।
সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভেবে দেখুন ও প্রস্তুতি নিন
কোন বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন তখন সেটি সফল হলে কী হবে বা কী কী ইতিবাচক দিক আসবে আর কী কী নেতিবাচক বিষয় ঘটতে পারে সেটি ভাবুন। তারপর নেতিবাচক বিষয়গুলো সামাল দেয়ার মতো সামর্থ্য আছে কি-না সেটি ভেব দেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নেতিবাচক বিষয়ের জন্য আগে থেকেই মানসিক ভাবে প্রস্তুতি থাকলে পরবর্তীতে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেয়াটা সহজ হয়।
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না
অনেক সময় মনে হতে পারে যে অন্য কেউ কোন একটি কাজ হয়তো পারছে বা কোন একটি বিষয় পারছে কিন্তু আপনি কেন পারছেন না আবার পরিবারের সদস্যরাও অনেক সময় আমাদেরকে অন্য সফল মানুষদের সাথে তুলনা করে, এ বিষয়গুলো মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। ফলে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। একধরনের দ্বিধা এবং ভয় কাজ করে। তাই অন্যের সাথে নিজের তুলনা করা আজই বন্ধ করুন।
নিজের প্রসংশা করুন
জীবনে কী ইতিবাচক কিছুই করেননি? অবশ্যই করেছেন! তা যত ছোটই হোকনা কেন সেই ছোট ছোট বিষয়গুলোর জন্য নিজের প্রসংশা করুন, দেখবেন আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে। আর আপনার সিদ্ধান্ত নেয়াও তখন অনেক বেশি সহজ হবে।
শিশুর প্রতি নজর দিন
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন যে, শিশু ছোটবেলা থেকে অনেক বেশি আদরে বড় হয় এবং তার সব সিদ্ধান্ত তার বাবা-মা বা অন্য কেউ নিয়ে দেয় এমন শিশুদের ক্ষেত্রে তারা বড় হলেও তাদের মধ্যে নির্ভরতার প্রবণতাটা থেকেই যায়। ফলে বড় হওয়ার পরেও তারা আসলে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার হলে তখন সেটি আর নিতে পারে না। সেক্ষেত্রে যেটি করতে হবে, তা হচ্ছে শিশুদেরকে ছোটবেলা থেকে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিতে হবে যাতে করে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে যেমন তাকে বলা যেতে পারে যে সকালে আসলে সে নাস্তায় কী খেতে চায় ডিম ভাজি নাকি ডিম পোঁচ। এধরনের অভ্যাস তার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করে।