কি এই মাল্টিভার্স? মাল্টিভার্স থিওরি
মাল্টিভার্স কি?
মাল্টিভার্স (Multiverse) শব্দটা মূলত
Multiple এবং Universe এর সমষ্টিযোগে তৈরি। আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব
(Observable Universe) ছাড়াও যে আরো কিছু থাকতে পারে, সেখান থেকেই মাল্টিভার্স ধারণার
উৎপত্তি। আমরা যে ইউনিভার্স বা মহাবিশ্বে বসবাস করি, যা দেখতে পাই, স্পর্শ করা যায়,
গতানুগতিক বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকেই আমরা সবকিছু যেখানে পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলো হয়তো
এখানকার মতো কাজ করে অথবা করে না- তাহলে এদেরকে আমরা একত্রে বলব মাল্টিভার্স আর একেকটাকে
বলব প্যারালাল ইউনিভার্স বা অল্টারনেটিভ ইউনিভার্স।
এই তত্ত্ব যারা সর্বপ্রথম উত্থাপন করেন,
তাদের মধ্যে বিজ্ঞানী শ্রোডিন্জারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৫২ সালে ডাবলিনে,
বিজ্ঞানী আরউইন শ্রোডিন্জারের এই ব্যাপারে একটি উপমা তুলে ধরেন। তার তত্ত্ব অনুসারে,
যে কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাব্য ফলাফল আসলে একের পর এক বা কোনো কিছুর পরিবর্তে হয় না, বরং
একই সময়ে ঘটে। এই ব্যাপারটি নিয়ে তার একটি অতি পরিচিত “বিড়াল প্যারাডক্স” আছে। এই পর্যন্ত
প্যারালাল ইউনিভার্স বা মাল্টিভার্সের অনেকগুলো ধারণা প্রস্তাবিত হয়েছে। তবে এটা নিয়ে
এত চিন্তিত হবার কিছু নেই কেননা, কোনো প্রস্তবনাই আজ পর্যন্ত প্রমাণ করতে সম্ভব হয়নি।
৩টি মাল্টিভার্স ধারণা তুলে ধরা হলো-
১. বাবল ইউনিভার্স/ বেবি ব্লাকহোল ইউনিভার্স:
মাল্টিভা্র্স বলতে আমরা সচরাচর যাকে
বুঝিয়ে থাকি সেটা হচ্ছে এই ধরনের মাল্টিভার্স। এই মডেল অনুযায়ী, আমাদের অবজারভেবল ইউনিভার্সের
বাইরেও (অনেক অনেক দূরে) হয়তো আরো অনেক ইউনিভার্স থাকতে পারে। প্রত্যেকটা ইউনিভার্সকে
এখানে বাবলের বা বুদবুদের সাথে তুলনা করা হয়, যেগুলো সবসময় সম্প্রসারিত হয়েই যাচ্ছে।
যদি এই ধরনের ইউনিভার্স ব্ল্যাকহোলের মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে সেটাকে আমরা দেখতে পারব
না। অর্থাৎ, আমাদের ইউনিভার্সের বাইরে বা ভেতরে অবস্থিত ব্যাল্কহোলের মাঝেও একাধিক
ইউনিভার্স থাকতে পারে, যা এখনও আমাদের অজানা।
এই ধারনার জন্ম ঘটেছিল মূলত এই প্রশ্ন
থেকে, “কিভাবে শুধুমাত্র আমাদের ইউনিভার্সই এত সুন্দর করে গ্যালাক্সি, নক্ষত্র বা আমাদের
জীবনধারনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারে”? উত্তরটা হলো, যদি সত্যি সত্যিই বাবল বা
ব্ল্যাকহোল ইউনিভার্স থেকে থাকে যা আমাদের দৃষ্টিগোচর না, তাহলে তাদের পদার্থবিজ্ঞানের
নিয়মগুলোও হয়তো আমাদের নিয়মের থেকে ভিন্নভাবে কাজ করবে। ব্যাপারটা এমন যে, আমাদের পাই(π) মান আমরা বের করেছি 3.1416… কিন্তু হয়তো অন্য ইউনিভার্সগুলোতে
সেই মান ভিন্ন। আবার এখানে গ্রাভিটি যেভাবে কাজ করে, সেখানে হয়তো গ্রাভিটি ব্যাপারটাই
নেই! আমরা এই ইউনিভার্সে টিকতে পারি, কেননা এই ইউনিভার্স আমাদের বসবাসের অনুকূলে পদার্থবিজ্ঞানের
সূত্রগুলো ক্রিয়ারত থাকে। যদি তা না হতো, তাহলে আমরা এখানে টিকতেই পারতাম না। হয়তো
দেখা যেত, এমন এক ইউনিভার্সে বাস করছি যেখানে
১ এর সাথে ১ গুন করলে ৪ হয়!
২. মেমব্রেইনস ও বাড়তি মাত্রা:
স্ট্রিং থিওরি অনুযায়ী আমাদের চেনা
পরিচিত ৩টি মাত্র বা মাত্রা ছাড়াও আরও ৭টি ডাইমেনশন অর্থাৎ মোট ১০টি মাত্রা রয়েছে।
আমরা শুধুমাত্র এমন একটা তলে রয়েছি যেটা শুধুমাত্র ত্রিমাত্রিক বস্তু বা পদার্থের অস্তিত্ব
ধারণেই সক্ষম। যেহুতু আমাদের সুপার ইউনিভার্স ৯টি মাত্রা ধারণ করে আর আমরা শুধুমাত্র
ত্রিমাত্রিক অথবা তার নিচের মাত্রার অস্তিত্বের অনুভব করতে পারি; সেহুতু বলা যায়, এরকম
আরো অসংখ্য ইউনিভার্স থাকতে পারে যেগুলো বহুমাত্রিক জগতের নিয়ম মেনে চলে। আর এইসব ইউনিভার্সকে
যেহুতু একটি সুপার ইউনিভার্সের অংশ মনে করা
হয়, তাই প্রতিটি ইউনিভার্সকে এক-একটি মেমব্রেইন হিসেবে কল্পনা করা হয়। আর এখান থেকেই
বহুমাত্রা ও মেমব্রেইন ধারণার উৎপত্তি।
৩. বহু পৃথিবী বা ম্যানি ওয়ার্ল্ড থিওরি:
দুঃখজনক হলেও সত্য, পদার্থবিজ্ঞানীরা
এখনো কোয়ান্টাম মেকানিক্সে তরঙ্গের কাজ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাননি। আর এই ধরনের
মাল্টিভার্সের ধারনা পুরোপুরি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত। তাদের একটি
হাইপোথিসিস হল, কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কোন ঘটনার সম্ভাব্য অসংখ্য ফলাফল একই
সময়ে অসংখ্য পৃথিবীতে ঘটে থাকে। অর্থাৎ, তুমি হয়তো রাস্তার বের হয়েছ কারো বাসায় যাওয়ার
জন্যে। এখন এই ঘটনায় তুমি শুধুমাত্র একটা ফলাফল পাবে। হয়তো তুমি তার বাসায় পৌছে যাবে।
কিন্তু বাকি সম্ভাব্য ফলাফলগুলো? হতে পারতো, তুমি রাস্তায় এক্সিডেন্ট করেছ, হতে পারতো,
তুমি হয়তো ঘর থেকেই বের হওনি। এরকম আরো অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটতে পারতো। আর এই থিওরি অনুযায়ী.
সেই অসীম সংখ্যক ঘটনা হয়তো একই সময়ে অন্যান্য প্যারালাল ইউনিভার্সের পৃথিবীতে ঘটে থাকে।
আমাদের মহাবিশ্বে আইনস্টআইন বিজ্ঞানী হলেও অন্য ইউনিভার্সে সে ঠিকই ফেসবুকের আবিষ্কারক!
বিষটি মজার না?
এই মহাবিশ্বে আমরা হয়তো শুধু একটি ফল পেয়ে থাকি, তাই একটি লাইফচেইনই অতিবাহিত করতে পারি। অন্যান্য ঘটনাগুলোর চেইন প্রতিফলিত করে হয়তো অন্যান্য প্যারালার ইউনিভার্সের আমাদের ভিন্ন ভার্সনগুলো! বিজ্ঞানী শ্রোডিন্জার আসলে এই ধরনের মাল্টিভার্সের দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন।