বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে হাঁস!

১৯৭৪ সালের স্কটল্যান্ডে প্রফেসর উদ্ভাবনী চিন্তা করেছিল এমন এক উদ্ভাবন করেছিলেন, যা জ্বালানি ব্যবহারের ইতিহাস বদলে দিতে পারত সেই যন্ত্রের নাম হলো Edinburgh Duck। অদ্ভুত নাম হলেও ভালো করে লক্ষ্য করলে নামের উৎস আন্দাজ করা যায়। এখানে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হাঁসের সাঁতার কাটার সাথে সম্পর্কযুক্ত।

বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে হাঁস!

হাঁসের শরীরের পিছনের অংশ দেহের সাথে ধাক্কা খেয়ে দূষণহীন বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

সোর্স:Engineersimple.com 

গোটা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যম এবং ব্রিটিশ সরকার এ বিষয়ে গভীর আগ্রহ দেখে ছিল কারণ এমন আইডিয়ার পিছনে বিশাল সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আইডিয়া মুখ থুবড়ে পড়ল।

পরের কয়েক শতাব্দীর অনেক ভবিষ্যৎমুখী উদ্ভাবনের মত এটিও সাফল্যের মুখ দেখতে পেল না। মনে রাখতে হবে ঢেউয়ের প্রত্যেকটি কনা কিন্তু মহাসাগর অতিক্রম করে না বরং বাতাসের ধাক্কায় প্রায় একই জায়গায় চক্রাকারে নড়াচড়া করে।

তার ফলে যে শক্তি সৃষ্টি হয় সেটি পরের কোনায় স্থানান্তরিত হয়। ঢেউ এর উপরিভাগে সবচেয়ে শক্তিশালী সঞ্চালন ঘটে। গভীরতা বাড়লে সেই শক্তি কমতে থাকে ঢেউয়ের গতিবিধির জটিল হলেও এর পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। স্যাটেলাইট থেকে বাতাস সম্পর্কে পাওয়া তথ্য সেই পূর্বের দিতে সহায়তা করে। 

কিভাবে হাঁসটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে?

ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একাধিক উপায় রয়েছে।যেমন: 

১. Point Absorber ব্যবহার করা যায় সেটি পানির উপর ভাসে এবং সবদিক থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। সমুদ্রের নিচের মাটিতে নোঙ্গর করা থাকে বলে নড়চড় হয় না। Buoy এবং স্থায়ী অংশের মধ্যে সঞ্চালন হয় বলে ভেতরের পিষ্টন একটি জেনারেটর চালায়।

২. Surface attenuator কাজে লাগানো যেতে পারে। একাধিক অংশে নিয়ে তৈরি এই যন্ত্র ঢেউয়ের সামনে খাড়া হয়ে থাকে। ঢেউয়ের ধাক্কায় অংশগুলির মধ্যে সঞ্চালনের ফলে শক্তি সৃষ্টি হয়। 

Schematic চিত্র

৪টি Off-shore প্রযুক্তির সমন্বয়ে একটি Schematic চিত্র দেখানো হয়েছে

৩. Oscillating Water Column, সেই কাজ করে। এই যন্ত্রের কিছু অংশ পানির নিচে থাকে প্রত্যেক কেউ ভিতর বাতাস চেপে ধরে তার ফলে টারবাইন ঘুরতে থাকে হাঁসটি surface attenuator মতো কাজ করে।

কেন প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছিল?

১৯৭৩ সালে পেট্রোল সংকটের ফলে অভাব মেটাতে এটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এর আগে পারমানবিক বিদ্যুৎ জনমানুষের কাছে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছিল‌। যন্ত্রটির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেনি।

সাফল্যের সম্ভবনা

আজও ১৭০০ এর মত সংকট দেখা যাচ্ছে। কার্বন নির্গমন শূন্যে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। অথচ বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েই চলছে।

২০৪৫ সালের মধ্যে সেই চাহিদা আনুমানিক ৩০% বেড়ে যাবে।এমন প্রেক্ষাপটে জোয়ার ভাটা ও ঢেউ থেকে জ্বালানি উৎপাদন আবার গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ শীতকালের অন্ধকার দিনগুলিতে সূর্য না দেখা গেলে এবং বাতাস না বইলে জ্বালানীর বিকল্প উৎসের প্রয়োজন হবে। ঢেউ সম্পর্কে শুধু আভাস পাওয়া যায় না সারা বছরই ঢেউ নির্ভরযোগ্যভাবে সমুদ্রের গতি টানে।

Wind Turbine এর তুলনায় Wave Energy Plant আরো অনেক গুন বেশি জ্বালানি উৎপাদনের ভূমিকা রাখে।

বাতাসের তুলনায় পানির ঘনত্ব কয়েক শ গুণ বেশি হওয়ায় এমনটা ঘটে।

২০২১ সালে ইউরোপে তার পূর্বের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি ঢেউ চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো জোয়ার ভাটা ও ঢেউয়ের শক্তির পেছনে প্রায় ৭ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করেছে। কাগজে-কলমে ঢেউয়ের শক্তির পরিমাণ বিশ্বব্যাপী চাহিদার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। বাস্তবে ২০৫০ সালের আগে এর অনুপাত ১০% হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বর্তমানে ঢেউয়ের শক্তি কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লান্ট বাস্তবে স্কটল্যান্ডে চালু হয়েছে। প্রবল বাতাস, বিশাল ঢেউ, তরঙ্গ শক্তি নিয়ে গবেষণা করার এমন দীর্ঘ ঐতিহ্য অন্য কোথাও দেখা যায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞদের মতে বায়ু শক্তির তুলনায় ঢেউয়ের শক্তি এখনো প্রায় ২০ বছর পিছিয়ে রয়েছে অদূর ভবিষ্যতে বায়ু বা সৌর শক্তিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবার সম্ভাবনা ও অত্যন্ত ক্ষীণ, কিন্তু এই উৎস ও আকর্ষনীয় হয়ে উঠতে পারে।

নির্গমন হীন জ্বালানির পথে ঢেউ চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভালো সমাধান হতে পারে , সেই লক্ষ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কর্ম ক্ষমতা ও ব্যয়ের নিরিখে বর্তমানে তরঙ্গ শক্তি অন্যান্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

 তবে ভবিষ্যতের Energetics অংশ হিসেবে এই উৎস অনেক সুবিধা বয়ে আনতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url