তেল খাওয়ার উপকারী ও ক্ষতিকর দিকগুলো কী?

প্রতিদিনের রান্নার কাজে তেল তো লাগেই। সবজি, মাছ, মাংস, ডাল, খিচুরি কোনটাই বা তেল ছাড়া হয়! কিন্তু সব তেল যে সাস্থ্যের জন্য সমান উপকারি, তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে উপকারি তেলের তালিকা। কোনটি  বলছে অলিভ অয়েলই ভালো, কোনটি আবার সুর্যমুখীর তেল কিংবা অ্যাভোকাডো তেলের পক্ষে। সরিষার তেলের উপকারিতাও কম নয়, তবে এর ব্যবহার বর্তমানে কমেছে। বর্তমানে সয়াবিন তেলের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।

তেল কেন প্রয়োজন

ভিটামিন কয়েক ধরনের হয়ে থাকে যেমন ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই এবং কে। এসব ভিটামিনের মধ্যে এ, ডি এবং কে হচ্ছে তেলে দ্রবনীয়  ভিটামিন। অর্থাৎ এই ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরে তখনই কাজ করবে যখন এর সাথে তেল বা চর্বি যোগ করা হবে।

এখন যদি তেল ছাড়া বা প্রয়োজনের তুলনায় কম তেল ব্যবহার করা হয় তবে খাবারের মধ্যে যে ভিটামিন থাকে সেগুলো আমাদের দেহে কাজ করবে না বা কাজ করতে পারবে না। অথচ এগুলো আমাদের শরীর এর জন্য অতিপ্রয়োজনীয়।

তেল খাওয়ার উপকারী ও ক্ষতিকর দিকগুলো কী?

তেল কতটুকু খাবেন

সম্প্রতি সরকারি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাথাপিছু খাবার তেল ব্যবহারের পরিমাণ ২০১৫ সালে যেখানে ১৩.৮০ কেজি ছিলো তা ২০১৯ সালে শতকরা ৩৬ ভাগ বেড়ে ১৮.৭ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। ভোজ্য তেলের এমন চাহিদা বেড়ে যাওয়া জনসাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্রান্ডের নানা ধরনের উদ্ভিজ্জ তেল পাওয়া যায় যার সবগুলোই যে সাস্থ্যসম্মত এমন  না। আবার সব তেলের মাঝে পার্থক্যও নেই। তাই কোন তেল খাচ্ছেন- সেটা যেমন জানা জরুরি, তেমনি কি পরিমান তেল খাওয়া উচিত তা জানাও আবশ্যক।

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রত্যেকেরই উচিত তেল গ্রহনের পরিমান দৈনিক ১০ চা চামচ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। কাঁচা ও প্যাকেটজাত তেলও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

তেল খাওয়ার উপকার

ক্যালোরি

খাবার তেলে রয়েছে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি,ফ্যাটি এসিড ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরে নানা ধরনের পুষ্টি সল্পতা পুরন করে। তেলে সবচেয়ে উচ্চহারে ক্যালোরি পাওয়া যায়। যেমন- ১ গ্রাম তেল থেকে ৯ গ্রাম কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়।

কোলেস্টেরল

ভালো তেল রক্তের এইচডিএল অর্থাৎ  শরীরের জন্য উপকারি ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। কারোর শরীরে অ্যানস্যাচুরেটেড বা খারাপ কোলেস্টেরল বেশি থাকলে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে তেল,এটা হৃদরোগ ও  রক্তচাপ আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কমিয়ে দেয় ও লিভার সচল রাখে।

ফ্যাটি এসিড

ফ্যাটি এসিড উপাদান উদ্ভিজ্জ তেলে প্রচুর পরিমাণে থাকে যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে,এটি ত্বক ভালো রাখে,শরীরে বয়সের ছাপ দেরিতে পরতে সাহায্য করে ও চর্ম রোগ দূর করতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট

উদ্ভিজ্জ তেলে থাকা ভিটামিন ই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে যা ত্বক,হাড়,দাঁত ও চোখের জন্য বেশ উপকারি।

ভিটামিন শোষণ

শরীরের জন্য উপকারি  ই,ডি,কে ভিটামিন গুলো লিভারে শোষণ হতে তেলের প্রয়োজন। এজন্যই শাকসবজি ও অন্যান্য খাবারের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুন ঠিক  রাখতে তেলের প্রয়োজন।

তেল খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

প্রাণীজ তেলে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট খুব সহজে রক্তে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং এই চর্বি সহজে শরীর থেকে বের হতে পারেনা।ফলে হৃদরোগ, রক্তচাপ,ডায়াবেটিস ইত্যাদির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ট্রান্স ফ্যাট

ডুবো উদ্ভিজ্জ তেলে ভেজে যদি কেউ কিছু খান বা একই তেল বারবার ব্যবহার করেন, তবে সেই ভেজিটেবল তেল ভেঙে ট্রান্স ফ্যাটে রুপ নেয়,যা শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। 

তেল খেতে সতর্কতা

তেলের জন্য স্মোক পয়েন্ট হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্মোক পয়েন্ট এ পৌছালে তেলের গুনাগুন হারাতে শুরু করে এবং বিশাক্ত হয়ে উঠতে পারে। যে তেলের স্মোক পয়েন্ট বেশি, সেটি স্বাস্থ্য জন্য বেশি নিরাপদ বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মাস্টারক্লাস ওয়েবসাইট এর তথ্য অনুযায়ী, পরিশোধিত সূর্যমুখী তেলের ২২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, সয়াবিনের স্মোক পয়েন্ট ২৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, ঘি এর স্মোক পয়েন্ট হলো ২৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং সরিষার তেলের স্মোক পয়েন্ট হলো  ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

সরিষার তেল এর স্মোক পয়েন্ট বেশি হওয়ায় এটাকেই সবথেকে বেশি উপকারি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url